গাজী মুনছুর আজিজের ভ্রমণগল্প ‘অজানা অজন্তা’ এখন বইমেলায়
অমর একুশে বইমেলায় এসেছে গাজী মুনছুর আজিজের নতুন ভ্রমণগল্প ‘অজানা অজন্তা’। দেওয়ান আতিকুর রহমানের প্রচ্ছদের বইটি প্রকাশ করেছে চমনপ্রকাশ। প্রকাশনীর ৫৩৮ নম্বর স্টলসহ বইটি পাওয়া যাচ্ছে বাতিঘরের বাংলামটর (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র) ও শাহবাগের আজিজ মার্কেট শাখায়।
অজন্তার রহস্যময় গুহাগুলো পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ বছর আগে থেকে পাহাড় খোদাই করে গুহাগুলো তৈরি। এসব গুহার ভেতর পাথর কেটে কেটে তৈরি নানা শিল্পকর্ম ও গুহার দেয়ালে আঁকা রঙিন চিত্রকর্ম। যে কেউ রীতিমতো বিষ্মিত হবেন এসব শিল্পকর্ম দেখে।
ছোট-বড় ৩০টি গুহা রয়েছে অজন্তায়। গুহাগুলোর মধ্যে কোনোটি চৈত্য বা উপাসনালয়। আবার কোনোটি বিহার। প্রতিটি গুহার শিল্পকর্মে আছে আলাদা বৈচিত্র্য। মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষু বা সন্ন্যাসীরা সংস্কৃতিচর্চা বা ধর্মচর্চা বা উপাসনার জন্য এসব গুহা ও শিল্পকর্ম করেছেন।
প্রায় ৯০০ বছর ধরে নির্মাণ করা অজন্তা নবম বা দশম শতাব্দীতে হঠাৎ সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়। এরপর প্রায় হাজার বছর লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল শিল্পসমৃদ্ধ এসব গুহা। মূলত লেখক অজন্তার এসব গুহা ঘুরে ঘুরে যা দেখেছেন আর জেনেছের, তা সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ‘অজানা অজন্তা’ বইয়ে। তবে অজন্তার শিল্পের যে গভীরতা, সে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেননি লেখক। কেবল নিজের ভালোলাগাটুকু প্রকাশ করেছেন।
ভারতের মাহারাষ্ট্র রাজ্যের বাণিজ্যিক শহর আওরঙ্গাবাদ থেকে অজন্তার দূরত্ব প্রায় ১০১ কিলোমিটার।
গাজী মুনছুর আজিজের নেশা ভ্রমণ। পেশা লেখালেখি। ঘুরে বেড়ান দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ঘুরতে গিয়ে সেখানকার নদীর পানিতে শরীর ভেজানো তার আরেক নেশা। মাঝেমধ্যে বের হন সাইকেল অভিযানে। দেশের বাইরেও যান। লেখালেখি করছেন পাখি-প্রকৃতি, লোকসংস্কৃতি, খাবার, ইতিহাস-ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে।
এই লেখকের উল্লেখযোগ্য বই ‘রূপসী বাংলার রূপের খোঁজে’; ‘ভ্রমণের দিন’; ‘ভুটান দার্জিলিং ও অন্যান্য ভ্রমণ’; ‘অনন্য আরব’; ‘পজিটিভ বাংলাদেশ’, ‘ফাদার মারিনো রিগন’; ‘৭১-এর খণ্ডচিত্র’। সম্পাদনা করছেন ‘ঈদ উৎসব’ ম্যাগাজিন।
গাজী মুনছুর আজিজের বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য হিসেবে পাখি শুমারিসহ বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের সদস্য। পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে নিয়মিত প্রচারণা চালান। এভারেস্ট জয়ী সজল খালেদ স্মরণে প্রতি বছর কক্সবাজারে একক ম্যারাথন করেন।
গাজী মুনছুর আজিজের বাড়ি চাঁদপুর সদরের নানুপুর গ্রাম। জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনার দিঘলিয়ার চন্দনীমহল গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ মুনছুর গাজী, মা মরিয়ম বেগম। ২০০১ সালে তিনি চাঁদপুরে প্রতিষ্ঠা করেন মুনছুর গাজী ফাউন্ডেশন। এর উদ্যোগে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, বই বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, পাঠাগার পরিচালনা, পরিবেশ সচেতনতা, ইলিশ আড্ডাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
অজানা অজন্তা বই নিয়ে পাখিবিশারদ ও অভিযাত্রী ইনাম আল হক বলেন, ‘গাজী মুনছুর আজিজ অজন্তা দেখে দেশে ফিরেছেন, আওরঙ্গাবাদ-অজন্তার দীর্ঘ পথে আমার এক ঝটিকা সফরের দেড় দশক পরে। সেই নিরালা পথ, পানিহীন অঘোরা নদী, খাড়া পাহাড়ের অর্ধচন্দ্রাকার পাথুরে দেয়াল কেটে দুই সহস্রাব্দ আগে গড়া মনোহর প্রস্তরমূর্তি আর মলিন হয়ে আসা দেয়ালচিত্রগুলো চোখের সামনে নতুন করে তুলে ধরলেন মুনছুর আজিজ। অজন্তার অনন্য গুহাগুলো এবার ঘরে বসেই ঘুরে দেখার সুযোগ এনে দিল তার এ বই। আরামকেদারার এই ভ্রমণে কিছু নতুন চিত্র দেখলাম আর কিছু অজানা কাহিনি জানলাম, যা দেড় দশক আগের ভ্রমণে আমার দেখা ও জানা হয়নি। প্রাচীনকালের ভিক্ষু-জীবনের নানা কথা জেনে প্রস্তুত মন নিয়েই মুনছুর আজিজ অজন্তা দেখতে গেছেন আর দেখেছেন খুঁটিনাটি অনেক কিছু, যা না দেখেই গুহার পর গুহা পার হয় লোকে। তার চেয়ে বড় কথা, তিনি যা দেখেছেন আর যা জেনেছেন তার একটা সরল, অনাড়ম্বর, গতিশীল ও উপভোগ্য গল্প লিখেছেন এ বইয়ে। যারা কোনোদিন অজন্তা দেখার সুযোগ পাবেন না, যারা একদিন অজন্তা দেখতে যেতে চান, কিংবা যারা আমার মতো দেখেও পুরো দেখেননি তাদের পাঠ্য-তালিকায় গাজী মুনছুর আজিজের এ বইটির নাম দেওয়া যায়।’
বইটির গায়ের মূল্য ধরা হয়েছে দাম ২৫০ টাকা। তবে, বইমেলায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে মিলবে বইটি। বাতিঘরে সরাসরি না গিয়েও কেনা যাবে বই, যোগাযোগ করতে হবে ০১৯৭৩৩০৪৩৪৪ নম্বরে।