প্রথম ছুটির দিনে জমে উঠেছে বইমেলা
অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরুর পর আজ প্রথম শুক্রবার। ছুটির দিনটিতে মেলার পরিবেশ ছিল জমজমাট। সব বয়সী বইপ্রেমীদের ছিল ভিড়। স্টল-প্যাভিলিয়নে বই হাতে নিয়ে মলাট উল্টিয়ে দেখছিলেন তাঁরা। মেলা শুরুর তিন দিনের মাথায় বেচাকেনা শুরু হওয়ায় খুশি প্রকাশনা সংস্থাগুলো। যদিও মেলার পরিধি বাড়িয়ে দেওয়ায় বই খুঁজতে অনেক পথ হেঁটে ক্লান্ত হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের।
আজ শুক্রবারের মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায়। সকাল থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেছে বইপ্রেমীরা। স্টল ঘুরে ঘুরে তাঁরা বই দেখছেন, কিনছেন। বাবা, মায়ের হাত ধরে এসেছে ছোট শিশুরাও। যদিও এবার করোনার কারণে ছুটির দিনে ছিল না শিশুপ্রহর।
শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল বলেন, ‘প্রতি বছরই বইমেলায় আসি। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে মেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত শুরু হয়েছে। বন্ধের দিন মেলায় মানুষের উপস্থিতি দেখে আমার সাহস অনেকটাই বেড়ে গেছে। আসতে পেরে এবং বই কিনতে পেরে আমি খুশি।’
আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘মেলায় প্রচুর মানুষ এসেছেন। সব বয়সীরাই এসেছেন। অধিকাংশরাই মাস্ক পরে মেলায় এসে সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। এমনকি টিকা কার্ড নিয়ে প্রবেশের যে নিয়ম করা হয়েছিল বলে শুনেছি, তা গেটেই দেখা হয়নি।’
চাকরিজীবী রইসুন নেসা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ দুদিন মেলায় মানুষ নেই শুনছিলাম। ছুটির দিন দেখে আজ মেলায় এসেছিলাম। এসে তো দেখি প্রচুর ক্রেতা-দর্শনার্থী। বইয়ের প্রতি এত মানুষের টান দেখে ভালোই লাগছে।’
মাওলা ব্রদার্সের বিক্রয়কর্মী শাহীন শিকদার বলেন, ‘আজ মেলা শুরুর পর প্রথম শুক্রবার। ছুটির দিন হওয়ায় বেচাবিক্রি কিছুটা ভালো। কাল শনিবার। এদিনটিও মোটামুটি ভালো যাব বলে আশা করি।’
শিখা প্রকাশনীর প্রকাশক নাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন অনেক বই এখনও মেলায় আসেনি। বইপাড়ায় এখন চরম ব্যস্ততা। এরই মধ্যে পাঠকদের আনাগোনা বেড়েছে। ছুটির দিন হওয়ায় বিক্রিও কিছুটা বেশি। মানুষ বইমুখী হতে চায়, করোনাকালীন বইমেলায় মানুষের ঢল সেটিই প্রমাণ করে।’
এ দিন নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১৭৭টি। বিকেল ৩টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক বলয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক বিশ্বজিৎ সাহা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইকবাল হাসান, তাজুল ইমাম ও ইউসুফ রেজা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দে। অনুষ্ঠানের শুরুতে একুশ উদ্যাপন শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রাবন্ধিক বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতিসত্তার শেকড়ের অনুপ্রেরণার দিন। এই দিনটি ঐতিহ্যের পরিচয়কে দৃঢ় করেছে। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আজ সেটি সকল ভাষার প্রতীক হয়ে উঠেছে। কানাডাপ্রবাসী বাঙালি রফিক ও সালামের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় দ্রুত ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদান আজ বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বাঙালির বিশাল অহঙ্কারের বিষয়।’
‘বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে জাহীদ রেজা নূর বলেন, ‘একটি রক্তাক্ত জনযুদ্ধের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই জনযুদ্ধের একটি সাহিত্যিক মাত্রা আছে যাকে যথার্থ অনুধাবন করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের সাহিত্যিক ভূগোল বিনির্মাণ সম্ভব নয়।’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে শহীদ ইকবাল বলেন, ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন মানেই এদেশের আপামর জনতার সার্বিক মুক্তির সংগ্রামকে ধারণ এবং বেগবান করা।’