‘বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রসাহিত্যে মুক্তির দিশা খুঁজে পেয়েছেন’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল ২২শে শ্রাবণ বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমি অনলাইন মাধ্যমে আলাচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ‘পূর্ববঙ্গ থেকে বাংলাদেশ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল ও অধ্যাপক অনীক মাহমুদ।
বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, ‘আমারে তুমি অশেষ করেছ’ শীর্ষক রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী অদিতি মহসিন এবং রবীন্দ্রকবিতা ‘অনুগ্রহ’-এর আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী রুবীনা আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
স্বাগত ভাষণে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলার ধারণা বঙ্গবন্ধুর কুশলী নেতৃত্বে পরিপূর্ণতা লাভ করে। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে শিখরস্পর্শী করেন আর বঙ্গবন্ধু স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বপ্নসাধকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, পূর্ববঙ্গ থেকে বাংলাদেশ দুজন মহান মানুষের সামনে ছিল স্বপ্নের ভূমি। তাঁরা পূর্ববঙ্গ আলোকিত করে নিজেদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান ছড়িয়েছেন বাঙালির মানব সচেতনতায়। উপহার দিয়েছেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাঙালি জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্বে। ১৯১৩ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে। এভাবে এই দুজনের মাধ্যমেই মূলত বাংলা-বাঙালির দিগদর্শন ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের মানচিত্রে।
বেগম আকতার কামাল ও অনীক মাহমুদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্য ও সক্রিয়তার মধ্য দিয়ে বাঙালিত্বের বোধকে অনন্ত-অভিসারী করে তোলেন। আর বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের আদর্শকে ধারণ করে ভাষাভিত্তিক-অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের জন্ম দেন।
প্রধান অতিথির ভাষণে প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, আগস্ট বাঙালির শোকের মাস। এই মাসে আমরা রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলকে হারিয়েছি। হারিয়েছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বৈশ্বিক পরিসরেও আমরা দেখি ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার ভয়াবহ বিস্ফোরণের ইতিহাস।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শোককে শক্তিতে রূপান্তরের দীক্ষা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু সব সময় রবীন্দ্রসাহিত্যে মুক্তির দিশা খুঁজে পেয়েছেন এবং সেই মুক্তিমন্ত্রকে জাতির মুক্তির সংগ্রামে কাজে লাগিয়েছেন।
সভাপতির ভাষণে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীতে পাকিস্তানি শাসকচক্রের চরম বৈরিতার মধ্যেও আমরা বাঙালিত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করেছি। আমাদের এ সংগ্রামে প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কারণ, তিনি রবীন্দ্রনাথকে তাঁর জীবনচেতনার সঙ্গী করেছেন আর রবীন্দভুবন ক্রমশ আমাদের জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে আলোকবর্তিকা হয়ে কাজ করেছে। তাই আজও একটি মাঙ্গলিক সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু আমাদের চিরপ্রেরণার অনন্ত উৎস।
অনুষ্ঠানটি বাংলা একাডেমির ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।