মেলায় দৃষ্টিজয়ীদের বইয়ের স্বাদ দিচ্ছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা
চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রাণের এই বইমেলায় বইপোকা পাঠক-পাঠিকাদের উচ্ছ্বাস তো থাকবেই। আজ শুক্রবার (৩ ফ্রেব্রুয়ারি) মেলার তৃতীয় দিন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতা-দর্শকদের আনাগোনা। সেইসঙ্গে বইয়ের স্বাদ পেতে এসেছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরাও। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য মেলায় বইয়ের স্বাদ দিতে এসেছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা। সেখানে রয়েছে ব্রেইল পদ্ধতিতে তৈরি বই। যারা চোখে দেখতে পান না, তারা ইচ্ছে করলেই সেখানে বসে পড়তে পারছেন। যদিও বই বিক্রি করা হচ্ছে না। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা আবেদন করলেই নির্দিষ্ট সময় পর বিনামূল্যে বই তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে দাবি করেছেন প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনের সামনে অথবা বাংলা একাডেমির ২নং গেট সংলগ্ন স্থানে রয়েছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা নামে স্টলটি। যার নম্বর ৮৮৭ ও ৮৮৮। সেখানে বসে বই পড়ছিলেন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের এইচএসসির দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম নাজিম। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বইমেলায় আসার পর স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার বইগুলো পড়া হচ্ছে। এতে খুবই ভালো লাগা কাজ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা আসলে আমার হৃদয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। আমি চার থেকে পাঁচ বছর ধরে এই প্রকাশনার ব্রেইল বই পড়ছি এবং জ্ঞান অর্জন করছি।’
নাজিম আরও বলেন, ‘আপনারা সব স্টল বা প্যাভিলিয়ন ঘুরে বই খুলে খুলে দেখছেন, পছন্দ হলে বই কিনে নিচ্ছেন, কফি খাচ্ছেন এবং বইমেলার স্বাদ উপভোগ করছেন। আমাদের কিন্তু আপনাদের মত সেই সুযোগটা নেই। মেলায় এসে এই একটা স্টলে গুটি কয়েকটা বই আছে, এগুলোই পড়ছি। এটাই আসলে বড় প্রাপ্তির জায়গা।’
‘স্পর্শ ফাউন্ডেশন’ ও ‘স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা’ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ‘দৃষ্টিজয়ী’ বলে আখ্যায়িত করে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নাজিয়া জাবীন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা বইমেলায় দৃষ্টিজয়ীদের ব্রেইল বই পড়ার সুযোগ করে দিয়ে তাদের মধ্যে একটু হলেও মেলার আমেজ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের স্পর্শ ফাউন্ডেশন মূলত ২০০৮ সাল থেকে কাজ করছে। সেই হিসেবে এ বছর এর ১৫ বছর পূর্ণ হবে।’
নাজিয়া জাবীন আরও বলেন, ‘সাহিত্যের বই বা যেসব বই পড়ে মানুষ আনন্দ পায়, এ রকম ব্রেইল বই বাংলাদেশে একটাও ছিল না। আমরা দৃষ্টিজয়ীদের জন্য ১৫ বছরে শতাধিক বই নিয়ে এবার হাজির হয়েছি। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া এবং সুখময় অনুভূতিও বলা চলে।’
স্পর্শ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘স্পর্শ নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা ছিল। যেমন—গণগ্রন্থাগারে আমাদের একটা ব্রেইল কর্নার করার ইচ্ছা ছিল। এটা আমরা ইতোমধ্যেই করেছি। সেখানে শিশুরা যখনই আসে, তখনই ব্রেইল বই পড়তে পারে। এ ছাড়া শিশু একাডেমিতেও আমরা একটা ব্রেইল কর্নার করেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুল-কলেজেও আমরা ব্রেইল কর্নার করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত অসংখ্য ব্রেইল বই দৃষ্টিজয়ী পাঠকদের কাছে আমরা বিনামূল্যে তুলে দিতে পেরেছি।’