‘স্বতন্ত্র কাব্যপথের পথিক কাজী নজরুল ইসলাম’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচির আয়োজন করে।
বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিতে পুষ্পস্তবক নিবেদন করে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এ সময় একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, একাডেমির সচিব, পরিচালক, উপপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল ৪টায় অনলাইনে নজরুলবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। ‘বিদ্রোহী’র শতবর্ষ, জাগরণের শতবর্ষ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক খালেদ হোসাইন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম এবং ‘ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি’ শীর্ষক নজরুলগীতি পরিবেশন করেন শিল্পী সালাউদ্দিন আহমদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্যক্তিজীবন ও সাহিত্যজীবনে প্রথাগত সীমানা ভেঙেছেন, বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। বাংলা কবিতায় তিনি স্বতন্ত্র কাব্যপথের পথিক। নজরুল ধর্মীয় ও সামাজিক সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে সর্বমানবিক আন্তর্জাতিকতার জয়গান গেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহী’ কবিতার একশ বছর পূর্তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একটি বড় ঘটনা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. আবুল মনসুর বলেন, কবি নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি হচ্ছে এ বছর। দেশের এবং বিশ্বের সামগ্রিক বাস্তবতাতেও নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ তাঁর প্রবল প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আজও আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ে।
প্রবন্ধিক অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষে দাঁড়িয়ে আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রাসঙ্গিকতা ও তার অম্লান তাৎপর্যের কথা। উপনিবেশবাদের অবসান ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু বিশ্বায়নের শৃঙ্খল আর ধনতন্ত্রের শোষণ-বঞ্চনা-অত্যাচার-নির্যাতনসহ আর্থ-সামাজিক বৈষম্য সবকিছুই বলবৎ আছে, কোনও ক্ষেত্রে বেড়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষ তাই আমাদের নতুন করে অন্যায়-অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিদ্রোহ ঘোষণা করার প্রেরণা যোগায়।
আলোচক অধ্যাপক খালেদ হোসাইন বলেন, নজরুলের কবিতার বিদ্রোহ দেশকালের কোনও সীমানা মানে না। ব্যক্তি নজরুলের মতোই দেশ ও কালের গণ্ডি ভেদ করে মানুষের অন্তর্গত বিদ্রোহী সত্তাকে তা হাজির করে।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরুল বাংলা কবিতায় সম্পূর্ণ নতুন স্বরের সংযোজক। রবীন্দ্রনাথের প্রভাব-বলয়ের বাইরে গিয়ে তিনি কবিতা-প্রকরণ, কাব্যভাষা ও বিষয়বস্তুতে নবচেতনা সঞ্চার করেছেন। তাঁর এই নতুনত্বের প্রয়াস পরিলক্ষিত হয় ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়ও, শতবর্ষ পরেও যার আবেদন ও প্রাসঙ্গিকতা একবিন্দু হ্রাস পায়নি।
স্বাগত বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার পূর্বের বাংলা কবিতা আর ‘বিদ্রোহী’ রচনার পরের বাংলা কবিতা এক নয়। বাংলা কবিতার গতিপথকে বদলে দিয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। শতবর্ষ পেরিয়ে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা এখনও নতুন তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতায় ধরা দেয়।