গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলা ভাষার দাবিতে প্রস্তাব উত্থাপন
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি সদস্যদের বাংলায় বক্তৃতা প্রদান এবং সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ইংরেজিতে প্রদত্ত বক্তৃতায় বাংলাকে অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে উল্লেখ করে ধীরেন্দ্রনাথ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবি তোলেন। এ ছাড়া সরকারি কাগজে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান তিনি।
সংসদ সদস্য প্রেমহরি বর্মণ, ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত ও শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। তাঁরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন এবং তাঁদের এ সমর্থনের মাধ্যমে মূলত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাভাবিক মতামতই প্রতিফলিত হয়েছিল।
তমিজুদ্দিন খানের নেতৃত্বে পরিষদের সব মুসলমান সদস্য (সবাই মুসলিম লীগের) একযোগে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। খাজা নাজিমুদ্দিন এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, ‘পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ চায় রাষ্ট্রভাষা উর্দু হোক।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এ প্রস্তাবকে পাকিস্তানে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেন। উর্দুকে লাখো-কোটি মুসলমানের ভাষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কেবল উর্দুই হতে পারে।’ অনেক বিতর্কের পর সংশোধনীটি ভোটে বাতিল হয়ে যায়। সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে অনেক বাঙালি মুসলমান সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উত্থাপিত সংশোধনীটিকে সমর্থন করতে পারেননি।
গ্রন্থনা : সেখ ফয়সাল আহমেদ