উদ্বোধনের অপেক্ষায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। ভাষা শহীদদের স্মরণে এদিন থেকে শুরু হচ্ছে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনের অন্যতম ঐতিহ্য ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা।’এরই মধ্যে শেষ হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সেজেছে স্টল ও প্যাভিলিয়নে। আছে লেখক চত্বর, মঞ্চ। ৬৩৫ প্রতিষ্ঠানের জন্য ৯৩৭ ইউনিট বরাদ্দ পাওয়া প্রকাশকরাও প্রস্তুত। উচ্ছ্বসিত কবি-সাহিত্যিকরা। তারা অপেক্ষায় আছেন উদ্বোধনের। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন।
আজ বুধবার (৩১ ফেব্রুয়ারি) প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, উদ্বোধন উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। যদিও বিকেল পর্যন্ত বেশ কিছু স্টল-প্যাভিলিয়ন ছিল অসম্পূর্ণ। কাঠামো প্রস্তুত হয়ে গেলেও চলছিল ইলেক্ট্রিক্যাল ও সজ্জার কাজ।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে এবারের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছে ১২০টি প্রতিষ্ঠান। তাদের জন্য বরাদ্দ ১৭৩টি ইউনিট। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আছে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠান। তারা বরাদ্দ পেয়েছে ৭৬৪টি ইউনিট। সব মিলিয়ে ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে মেলায়। মেলায় একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি প্যাভিলিয়ন শোভা পাচ্ছে। আর উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় আছে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগের স্টল বরাদ্দ। বাংলা একাডেমি এবার রেখেছে তিনটি প্যাভিলিয়ন। এ ছাড়া শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য তাদের আছে একটি স্টল।
টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট আটটি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রয়েছে। সাহিত্যপ্রেমীদের মেলায় আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে করা হয়েছে এই ব্যবস্থা। এবার খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের পাশে রাখা হয়েছে। আছে নামাজের স্থান। সবার সুবিধার্থে করা হয়েছে অস্থায়ী শৌচাগারসহ অন্যান্য পরিষেবার ব্যবস্থা আছে।
মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেছেন, এবার বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। সে উপলক্ষে প্রস্তুতিতে কোনো কার্পণ্য হয়নি। লেখক-প্রকাশক-পাঠক-ক্রেতার উপস্থিতি মুগ্ধতা ছড়াবে এবারের মেলা।
ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ উদ্বোধন করবেন। সেখানে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করবেন। পরে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘Collected Works of Sheikh Mujibur Rahman : Volume-2’ ও আরও কয়েকটি নতুন বইয়ের গ্রন্থ-উন্মোচন করবেন।
এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে মেলা। যদিও রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবে না। আর ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে, ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন মেলা সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’থাকবে। এ ছাড়া অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা জানিয়েছেন, আগামীকাল থেকে শুরু হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মাসজুড়ে নিরাপত্তার চাদরে থাকবে মেলা। মেলায় আগতদের স্বস্তিতে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।