বইমেলার শুরুতেই অরুণ কুমার বিশ্বাসের দুটি বই
কথাসাহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাস ভৌতিক ও রম্য লেখায় ইতোমধ্যে নিজস্ব একটি ধারা তৈরি করেছেন। মূলত ডিটেকটিভ ও অ্যাডভেঞ্চার লিখে অভ্যস্ত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে পড়েছেন। পরে আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন লন্ডনে। এখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগে মাস্টার্স করছেন। পেশাগত (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) কাজের পাশাপাশি তিনি নিজেকে নানারকম সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে ব্যাপৃত রেখেছেন। আবৃত্তি, বিতর্ক, উপস্থাপনা, মোটিভেশনাল স্পিচ ইত্যাদি ছাপিয়ে তিনি পুরোদস্তুর লেখক।
লেখালেখির শুরুটা পদ্য দিয়ে হলেও এখন তিনি গদ্য লিখছেন। তার গোয়েন্দা চরিত্র অলোকেশ রয় একের পর এক রহস্য উদঘাটন করে চলেছে। তার উল্লেখযোগ্য গোয়েন্দা উপন্যাস জলপিপি, অমীমাংসিত খুন, কফিমেকার, অথই আঁধার, আলিম বেগের খুলি। আরও দুটো গোয়েন্দা চরিত্র আছে তার- কিশোরদের জন্য ডিটেকটিভ রোহান আর একেবারে ছোট্ট যারা তাদের জন্য গোয়েন্দা গুবলু।
রহস্য পত্রিকার নিয়মিত লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাস জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে নিয়মিত কলাম ও রম্য লিখে নিজের একটি পাঠকশ্রেণি তৈরি করেছেন। এবারের বইমেলার শুরুতেই শতাধিক বইয়ের লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাসের তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
কর্পোরেট প্রেম
শাহেদ ও শাওলির দাম্পত্যের শুরুটাই বেশ গোলমেলে। ওরা ভেবেছিল প্রেম-ভালবাসা আদতে কিছু নয়, স্রেফ টাকা ও ক্ষমতা দুজনের সম্পর্কে জোশ এনে দেবে। ফেসবুকে অঢেল সময় ঢালা শাওলির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। রাত জেগে মেসেঞ্জারে ‘টুঙ-টুঙ’শাহেদের সঙ্গে ক্রমশ তার দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। শাহেদও স্ত্রীর দিকে ফিরে তাকায় না। করপোরেট রাজ্যে সে বরং একাধিপত্য চায়। ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে রাকা-রোহানের কুসুমগরম প্রেম সহসাই টলে যায়। এর পেছনে শাওলির অবদান ছিল। বলতে নেই, ফিনফিনে শিফনে সে দুর্দান্ত। ওই ফিগার দেখে মাথা ঘোরে রোহানের। বুঝতে পারে না যে, মোহ আর প্রেম এক নয়। শাওলি তাকে সাময়িক উত্তেজনা হয়তো দেবে, কিন্তু কখনোই স্বস্তি দেবে না। আবার রাকার সাথে বান্ধবী শিখার সম্বন্ধ নিয়েও গুঞ্জন ওঠে। সোমত্ত দুটো মেয়ের মাঝে এত ঘনিষ্ঠতা কীসের! ওরা নাকি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কী কী সব করেও! এভাবেই ক্রমশ গড়ে ওঠে রম্যধাঁচে লেখা এই উপন্যাসের কোমল শরীর। অবশেষে প্রেম আসে, কোজাগরী পূর্ণিমার স্বচ্ছতোয়া আলোকচ্ছটার মতো।
অনিন্দ্য প্রকাশ প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদশিল্পী নিয়াজ চৌধুরী তুলি। মূল্য : ২৫০।
ভয়াল দ্বীপের রহস্য
ওই যে, ওই তো সবুজ ভ্যানিটি! ফলো কর! পালাতে দিস না। চেঁচিয়ে বলল নয়ন। ডানহাতের বুড়োআঙুল নিচে নামিয়ে ধ্রুব ইশারায় জানান দেয়, ওকে বস। গ্রিন লেডিকে আমি দেখছি। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপে এসে ফেঁসে যায় ওরা- কাজল, নয়ন আর ধ্রুব। মাফিয়া গিনির পাল্লায় পড়ে ওদের আনন্দ-আয়োজন সব মাটি। একের পর এক খুন ওদের বুকে ভয় ধরিয়ে দেয়। মাঝপথে যোগ দেন গুপি দারোগা। উসুর খুনি ধরতে গিয়ে দা-য়ের কোপ খায় হারু। ভয়াল মুখোশনাচ আর বিষাক্ত পোড়াগন্ধ ঘটনায় নতুন চমক জুড়ে দেয়। জ্যাকিদাদু তক্ষুণি ওদের দ্বীপ ছাড়তে বলে, কিন্তু ওরা শপথ নেয়- খুনের কিনারা না করে কোত্থাও যাবে না। শেষতক ওরা পারবে কি গিনিসোনার ভয়ঙ্কর রহস্য উদ্ঘাটন করতে! বাতিঘর প্রকাশিত এই বইটির প্রচ্ছদশিল্পীও নিয়াজ চৌধুরী তুলি। মূল্য : ৩৩০।
এছাড়াও লেখকের আলোচিত বইগুলো হলো- অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘আলিম বেগের খুলি’, অনিন্দ্যপ্রকাশ থেকে ‘অথই আঁধার’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে ‘ওরা ডিটেকটিভ’, তাম্রলিপি প্রকাশন থেকে ‘গোয়েন্দা রোহান’, শুদ্ধপ্রকাশ থেকে ‘লাল বিলুর কাণ্ডকীর্তি’, কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘হানাবাড়ি খুনরহস্য’, ‘কালোচিতার প্রেতাত্মা’, অর্জন প্রকাশ করেছে ‘ট্যাঙ্কিতে কালো ভূত’, মূর্ধণ্য থেকে ‘তেল ও আঁতেল’, কারুবাক থেকে ‘ফাইটার বুড়ো’, ঝিঙেফুল থেকে ‘শঙ্কুর বিজয় নিশান’, পাঠক সমাবেশ থেকে ‘নীল দুশমন’ ও আগামী প্রকাশনী থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ ইত্যাদি।