বইমেলায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ভিন্নধর্মী স্টল
এবারের বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ৬৪৮ নম্বর স্টলে গেলেই চোখে পড়বে একটি পাগলাগারদ। এর ভেতরে মাটিতে বসে আছেন ময়লা-ছেঁড়া জামা পরা এক ব্যক্তি। মাথায় এলোমেলো চুল। তার এক হাতে লাঠি, অন্য হাতে 'পাগলের গল্পগুচ্ছ’ নামক একটি বই। আর দেয়ালে লেখা রয়েছে ‘পাগল বলে গালি দেই যারে, আদৌ কী শুনি তারে’।
স্টলটি দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ভিন্নধর্মী এই স্টলটি দেখে প্রায় প্রতিদিনই স্টলটির সামনে ভীড় জমাচ্ছেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। তুলছেন ছবিও। ১৩ জন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের গল্প নিয়ে 'পাগলের গল্পগুচ্ছ’ বইটি প্রকাশ করেছে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী। পাবনার হেমায়েতপুরের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতালের মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে এই গল্পগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে।
গল্পগুলো অনুলিখনের মাধ্যমে পাঠযোগ্য করা হয়েছে বলে জানান গল্প সংগ্রাহক ও অনুলেখক মিজানুর রহমান সৈকত। মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের প্রতি সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতেই বইটি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা যায় তার সাথে আলাপকালে। তিনি বলেন, একজন মানুষ যখন কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে যায়, আমাদের সমাজে তাদেরকে অন্য চোখে দেখা হয়। তাদের শেকলবন্দি করে আটকে রাখা হয়। তাদের কথা কেউ শুনতে চায় না। তাদেরও ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা আছে, এটা অনেকেই বুঝতে চায় না। তাদেরকে বোঝা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ এসব মানুষদেরও আলাদা একটা চিন্তার জগৎ আছে। তাদেরও যে অনেক গল্প আছে, না বলা অনেক কথা আছে, সেগুলো শুনতে আমাদের ইতিবাচক মনোভাব হয়ে উঠে না। তাই আমরা ১৩ জন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের বলা গল্প নিয়ে এই বইটি প্রকাশ করেছি।’
জানা যায়, বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সোহেল নামের এক ব্যক্তি, যিনি বর্তমানে পাবনার হেমায়েতপুরের মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বইটির ভূমিকায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস লিখেছেন, ‘আমরা পাগলকে নিয়ে কৌতুক লিখি, গল্প লিখি, সিনেমা বানাই। কিন্তু, কোনোদিন পাগলের কাছ থেকে তার গল্প শুনতে চাইনি। পাগলদের প্রতি মানুষের এক ধরনের অবহেলা আছে। পাগলের কোনো কথা শোনা তো দূরে থাক, দূর থেকে পালাতে পারলেই যেন বাঁচি! বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীরা প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করতে গিয়ে এমন শত শত মানুষের দেখা পেয়েছে যাদের কথা অন্য কানে অগ্রাহ্য শোনালেও আমাদের কাছে কল্পকাহিনীর চেয়ে কম মনে হয়নি। কিছু কথার অসামঞ্জস্যের দোষে কোনো মানুষের সব কথাকে অগ্রাহ্য করা অযৌক্তিক। স্বাধীন দেশের প্রত্যকের কথা প্রকাশের অধিকার আছে, সেই মতাদর্শে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।’
বইটির মূল্য ৩০০ টাকা। তবে মেলায় ২৫ শতাংশ ছাড় দিয়ে ২২৫ টাকা দিয়ে কেনা যাচ্ছে বইটি। এই বই বিক্রির শতভাগ লভ্যাংশ মানসিক রোগীদের জন্য ব্যয় করা হবে বলেও জানায় বইটির গল্প সংগ্রাহক ও অনুলেখক মিজানুর রহমান সৈকত। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠাগারের তিনটি ইউনিট স্থাপন করেছি। এই বইয়ের আয় দিয়ে আরও বিভিন্ন স্থানে পাঠাগার তৈরি করা হবে।’