অগ্নিকাণ্ডে খোলা আকাশের নিচে হাজারও রোহিঙ্গা, ক্ষয়ক্ষতি ‘৪০ কোটি টাকা’
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় ১৬ নম্বর শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গতকাল রোববার বিকেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পরে ক্যাম্পের চারটি ব্লকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। এ ছাড়া আংশিক পুড়ে যাওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও তিন শতাধিক বসতবাড়ি। এর পর থেকেই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন সহায়-সম্বলহারা হাজারও রোহিঙ্গা।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ দেশি-বিদেশি সংস্থার বিভিন্ন স্থাপনাও অগ্নিকাণ্ডের তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি। সেসব স্থাপনায় থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ অগ্নিকাণ্ডে ৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অগ্নিকাণ্ডের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও ও প্রশাসন সমন্বিতভাবে অনুসন্ধান করে ক্ষয়ক্ষতির এই চিত্র পেয়েছে। ৮ নম্বর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) থেকে পাঠানো এক লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে ৮ নম্বর এপিবিএনের অধিনায়ক পুলিশ সুপার (এসপি) শিহাব কায়সার খান জানিয়েছেন, ক্যাম্পের বি-ব্লকের আবু ছৈয়দের বাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত। আবু ছৈয়দের স্ত্রী লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে গেলে ঘরের বেড়ায় আগুন লেগে যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে আর নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। পরে উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে ফায়ার সার্ভিসের আটটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডে সহায়-সম্বল হারিয়ে হাজারও রোহিঙ্গা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা জানিয়েছেন, আগুনে পুড়ে ঘরহারা রোহিঙ্গাদের শিক্ষাকেন্দ্র, মাদ্রাসা-মক্তব, উইমেন ফ্রেন্ডলি স্পেস ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে রাখা হয়েছে। এনজিও সংস্থাগুলো তাদের জরুরি খাবার সরবরাহ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের দ্রুত পুনর্বাসন করাসহ শীতবস্ত্র দেওয়া হবে।
গত এক বছরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গত বছরের ২২ মার্চ রাতে উখিয়ার ৮ ও ৯ নম্বর ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে বহু বসতবাড়ি পুড়ে যাওয়াসহ ১১ জন নিহত হয়। এ ছাড়া গত ২ জানুয়ারি অগ্নিকাণ্ডে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত একটি করোনা হাসপাতাল ও তার পাশের কয়েকটি বসতি পুড়ে যায়।