অন্তরঙ্গ ভিডিও দিয়ে ‘জিম্মি’, ‘খুন করে’ বাঁচার চেষ্টা প্রবাসী দম্পতির
কৌশলে আমেরিকাপ্রবাসী দম্পতির অন্তরঙ্গ মুহূর্ত এবং স্ত্রীর স্নানের দৃশ্য ভিডিও করেন নিজাম উদ্দিন নামে এক যুবক। পরে সেই ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে একপ্রকার জিম্মি করে ফেলেন তিনি। হাতিয়ে নেন টাকা-পয়সা। একপর্যায়ে নিজাম ভুক্তভোগী নারীকে প্রস্তাব দেন, প্রবাসী স্বামীকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ে করে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর তাতেই বাঁধে বিপত্তি। ফাঁদ থেকে বাঁচার চেষ্টায় এক পর্যায়ে নিজামকে খুন করে আমেরিকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন দম্পতি। কিন্তু বিমানবন্দরে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
হবিগঞ্জের ফুচকা হাউসের কর্মচারী নিজাম উদ্দিন খুনের পেছনে এমন ঘটনাই রয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রবাসীর জবানবন্দির বরাত দিয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উল্ল্যা।
এসপি মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, ১১ মার্চ নিজাম খুন হন। ১৫ মার্চ থানায় হত্যা মামলা হয়। আর গত মঙ্গলবার দেশত্যাগের সময় রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রবাসী স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আক্তারের আদালতে ওই প্রবাসী দম্পতি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
নিহত নিজাম উদ্দিন মাধবপুর উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ রোডের ঢাকা ফুচকা হাউসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। নিজাম উদ্দিন ও তাঁর দুই সহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ওই ব্যক্তির একটি টিনশেডের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) জানান, প্রায় চার বছর আগে দুই মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান ওই দম্পতি। ২০২০ সালের নভেম্বরে তাঁরা দেশে বেড়াতে আসেন। দীর্ঘদিন বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকার সুবাদে নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্ক হয়।
এই সুযোগে নিজাম উদ্দিন ওই প্রবাসী দম্পতির শোবার ঘরে ও বাথরুমে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে রাখেন। এর মাধ্যমে ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও ও ছবি দেখিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নিজাম দেড় লাখ টাকাও হাতিয়ে নেন বলেও জানায় পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, নিজাম এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী নারীকে তাঁর স্বামীকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ওই নারী। এক পর্যায়ে বিষয়টি তিনি স্বামীকে জানান।
এরপরই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ওই ব্যক্তি নিজাম উদ্দিনের কাছ থেকে ছবি ও ভিডিও উদ্ধারের পরিকল্পনা করেন বলে উল্লেখ করেন এসপি মোহাম্মদ উল্যা। তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় স্ত্রীর মাধ্যমে নিজাম উদ্দিনকে ডেকে আনা হয় হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলী এলাকার একটি গ্যারেজে। সেখানে নিজামকে মারধর করে তাঁর মোবাইল কেড়ে নেন ওই প্রবাসী ও তাঁর লোকজন। এ সময় নিজামের কাছে তাঁর ফোন খোলার জন্য আনলক প্যাটার্ন জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু নিজাম তা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে মোবাইলটি ভেঙে নিজামকে মারধর করা হয়। সেখানে নিজামের মৃত্যু হলে লাশ একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে রাখা হয়। এরপর ওই প্রবাসী ও তাঁর স্ত্রী হবিগঞ্জ থেকে পালিয়ে যান।’
এর পরই নিজাম উদ্দিনের বাবা ইমাম উদ্দিন চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকজনের আসামি করে গত ১৫ মার্চ হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন।