অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় প্রেমিকার হাতে প্রেমিক খুন
তিন বছর আগে আলী নূরের সঙ্গে আহিনা খাতুনের পরিচয় হয়। এরপর গড়ে ওঠে সখ্য। একপর্যায়ে বিয়ে না করেই ঢাকার আশুলিয়ায় বাঁধেন ঘর। কোনো পক্ষের পরিবারই জানত না একথা। কথা ছিল—বিয়ে করে জানাবেন। এরই মধ্যে নূর তাঁর গ্রামের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুরে যান। সেখানে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেন। পরে শুরু হয় হত্যার পরিকল্পনা। বাস্তবায়ন হয় গত শনিবার। আহিনা নিজ হাতে গলা কেটে হত্যা করেন তাঁর প্রেমিক নূরকে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন র্যাব-৪-এর পরিচালক মোজাম্মেল হক।
মোজাম্মেল জানান, সাভারের আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করত নূর ও আহিনা। এরই মধ্যে নূর গ্রামের বাড়ি গেলে গত ১৪ জুলাই আহিনা জানতে পারেন, সেখানে সে বিয়ে করেছেন। এতে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন আহিনা। কিন্তু, নূরকে বুঝতে না দিয়ে নিজের মধ্যে রাগ পুষে রাখেন। পরিকল্পনা করতে থাকেন নূরকে হত্যার।
১৭ জুলাই নূর সাভারের আশুলিয়াতে আহিনার কাছে ফিরে আসেন। আহিনা পরিকল্পনা মোতাবেক নূরকে বাসা পরিবর্তন করতে বলেন। পরে তাঁরা জিরাবো নামাপাড়ায় একটি টিনশেড বাসায় ওঠেন।
সেই বাসায় গত ৩০ জুলাই রাতের খাবার শেষে উভয়েই ঘুমাতে যান। নূরের ঘুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন আহিনা। একপর্যায়ে নূর ঘুমালে ভোরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তে পৌঁছান আহিনা। পরে ঘুমন্ত নূরকে বটি দিয়ে মাথা, গলা এবং বুকে নৃশংশভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আহিনার বক্তব্য অনুযায়ী, হত্যার পর নূরের মরদেহ কাঁথা চাপা দিয়ে ঢেকে রাখেন। পরে থালা-বাসন, কাপড়-চোপর এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি একটি বস্তায় করে অনুমানিক ভোর ৬টায় ঘর থেকে বের হন তিনি। এরপর জিরাবো বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে প্রথমে আবদুল্লাহপুর ও পরে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান।’
মোজাম্মেল হক জানান, এর আগে কাঁচপুরে পৌঁছে মজিবুর নামে এক বৃদ্ধের কাছে আহিনা নিজেকে চাকরিপ্রত্যাশী গার্মেন্টসকর্মী পরিচয় দেন। তারপর বাসা ভাড়া করে দিতে অনুরোধ করেন। মুজিবুরের কাছে আহিনা জানান, তাঁর একটি বাচ্চা আছে এবং স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন। এ কথা শুনে দুই হাজার ২০০ টাকায় একটি বাসা ভাড়া করে দেন মুজিবুর।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত রোববার বিকেলে বিবেকের তাড়নায় নূরের ভগ্নিপতি জাকিরকে মুঠোফোনে কল করেন। এসময় তিনি জানান, নূর অসুস্থ হয়ে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় দেলোয়ার বেপারীর টিনশেড বাড়িতে আছেন। এ কথা শুনে গত সোমবার নূরের পরিবারের লোকজন সেখানে যান। গিয়ে দেখেন—ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। পরে তালা ভেঙে ভেতরে গিয়ে তীব্র দুর্গন্ধসহ মেঝেতে কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় আলী নূরের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার নূরের বড়ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। এদিনই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আহিনা খাতুনকে র্যাব-৪ নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে গ্রেপ্তার করে।
মোজাম্মেল হক জানান, আলী নূর মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার হোগলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি চাকরির সন্ধানে ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে প্রথমে পোশাকশ্রমিক হিসাবে কাজ শুরু করেন।
এদিকে, আহিনার বাড়ি নীলফামারীতে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। পেশায় পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। চাকরির সুবাদে নূরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।