অপরাধ রুখতে আবারও রাজধানীবাসীর তথ্য সংগ্রহে পুলিশ
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০১৬ সালে ঢাকা মহানগর এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। এই তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এরপর ডিএমপি থেকে বারবার বলা হয়েছিল, ওই তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখে চলেছে।
তবে, সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কিছু অপরাধীকে গ্রেপ্তারের পর তাদের ব্যক্তিগত তথ্য নাগরিকদের ওই তালিকায় পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আবারও তথ্য হালনাগাদের ব্যাপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই লক্ষ্যে দ্বিতীয়বারের মতো আজ সোমবার থেকে রাজধানীজুড়ে পালিত হবে ‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ-২০২১’। এ কার্যক্রম চলবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ঢাকা মহানগরের ভাড়াটিয়াসহ রাজধানীতে বসবাসরত নাগরিকদের সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণ এবং বৈজ্ঞানিক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে প্রণীত সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সিআইএমএসকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, সিআইএমএসের ফলে যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের পাশাপাশি অপরাধীদের শনাক্তের পথ সহজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগ্রহশালায় যেসব নাগরিকের তথ্য নেই, আমরা মূলত তাদের তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছি। কিছু অপরাধীর তথ্য ওই তালিকায় না পাওয়ায় পুনরায় এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আশা করছি, জনগণ তাদের সুবিধার কথা ভেবে আমাদের সহযোগিতা করবে।’
এদিকে ডিএমপি থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, অপরাধ প্রতিরোধ, প্রতিকার ও জননিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর এলাকায় বাড়ি, স্থাপনা, প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে ৩০৬টি বিটে বিভক্ত করে ডিএমপির সব থানাধীন এলাকার বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্যাদি সফটওয়্যারে এন্ট্রির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
২০১৫ সাল থেকে ঢাকা মহানগর এলাকায় শুরু হয় বিট পুলিশিং প্রথা। অপরাধ ব্যবস্থাপনার জন্য নানাবিধ তথ্য সংগ্রহের অংশ হিসেবে মহানগরে বসবাসরত নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় নাগরিক তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম। তথ্যে বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত কল্পে প্রস্তুত করা হয় সিআইএমএস, যার যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর।
নাগরিক তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াটি অপরাধ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তা ছাড়া কোনো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে নাগরিক তথ্য কাজে লাগিয়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করার পথ সুগম হয়।
সংশ্লিষ্ট থানার বিট অফিসারের মাধ্যমে নাগরিক তথ্য প্রদান ছাড়াও যে কেউ ঘরে বসেই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক তথ্য ফরম পূরণ করতে পারবেন।
যেভাবে মোবাইল অ্যাপে নাগরিক তথ্য নিবন্ধন করা যাবে
প্রথমে গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে CIMS DMP লিখে সার্চ দিয়ে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। তারপর লগইন অপশনে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে নিবন্ধনে ক্লিক করতে হবে। এরপর একটি ভেরিফিকেশন কোড আপনার প্রদত্ত মুঠোফোনে পাঠানো হবে। ভেরিফিকেশন কোড অ্যাকটিভ করে পাসওয়ার্ড সেট করে লগইন করলে বিভিন্ন ক্যাটাগরি দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনার সঙ্গে সম্পর্কিত অপশনটিতে ক্লিক করলে একটি ফরম পাবেন।
ফরমে প্রদত্ত ঘরে আপনার সব তথ্য নির্ভুলভাবে পূরণ করে সাবমিট করলে আপনার কাজ শেষ হবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার মুঠোফোনে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। আপনার পূরণ করা তথ্য সেন্ট্রাল ডাটাবেজে যুক্ত হওয়ার আগে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আপনার প্রদত্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করবেন। তথ্য সঠিক থাকলে অ্যাপ্রুভাল দেওয়ার পর সিআইএমএসের মূল ডাটাবেজে আপনার তথ্য যুক্ত হবে। আর যদি কোনো কারণে আপনার ফরম পূরণ অসম্পূর্ণ হয় বা তথ্যে ভুল থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার মোবাইলে এসএমএস দিয়ে জানানো হবে।