অপহরণের শিশু অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি, গ্রেপ্তার ৫
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে আম কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এক শিশুকে অপহরণ করা হয়। তারপর শিশুকে বিক্রির জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। পরে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তিন বছরের শিশুকে গোপালগঞ্জে বিক্রি করে দেয় একটি চক্র।
এ ঘটনায় অপহৃত শিশুর ক্রেতাসহ অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা পিযূষ দম্পত্তিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মে) রাজধানীর শাহবাগ, সাভার ও গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন—অপহরণকারী পিযূষ কান্তি পাল (২৯), সহযোগী ও স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল (২৫), শিশু বিক্রির মধ্যস্থতাকারী সুজন সুতার (৩২), শিশু ক্রেতা পল্লব কান্তি বিশ্বাস (৫২) ও তার স্ত্রী বেবি সরকার (৪৬)।
আজ শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ তথ্য জানান র্যাব-২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান। তিনি বলেন, ‘গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় বাসার সামনে বড় বোন হুমায়রার (৮) সঙ্গে খেলছিল অপহৃত শিশু মো. সিদ্দিকসহ (৩) আরও সাত-আটজন। এ সময় এক অজ্ঞাত ব্যক্তি সবাইকে চকলেট খাওয়ায়। একটু পর হুমায়রাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর শিশু সিদ্দিককে আম কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে। দিন শেষে তাদের মা বাসায় এলে হুমায়রা বিষয়টি তার মাকে জানায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।’
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘পরবর্তীতে অপহৃত শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। এরপর থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। পরবর্তীতে শিশুটির বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটির তদন্ত শুরু করে র্যাব-২।’
অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘র্যাব তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে যে, অপহরণকারী ব্যক্তি সাভারের বাসিন্দা পিযূষ কান্তি পাল ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল। এই দম্পতি শিশুটিকে বিক্রির উদ্দেশে একটি অনলাইন গ্রুপে পোস্ট দেয়। এরপর তারা সুজন সুতারের (৩২) মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার (৪৬) দম্পতির কাছে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন।’
র্যাব জানায়, প্রথমে শিশু কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত সুজন সুতারকে ঢাকার শাহবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার অপহৃত শিশুকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াসি গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়।
আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘অপহরণকারী চক্রটির মূল হোতা পীযূষ কান্তি পাল পঞ্চগড় জেলার সদর থানার বাসিন্দা। তিনি একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এমবিএ পড়ার সময় পার্ট টাইম জব হিসেবে বিউটি পার্লার/স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। পীযূষ কান্তি পাল স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় রিদ্ধিতা পালের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তারা ২০২০ সালে বিয়ে করেন। মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় থেকে তিনি মানবপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ফলে ২০২২ এর মে-তে মানব পাচারের অভিযোগে বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। এই মামলায় কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বের হন তিনি।’
র্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, “সাভার থেকে ঢাকা উদ্যান এলাকায় গিয়ে শিশু সিদ্দিককে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহরণের পর নিজেদের সন্তানের ছবি ব্যবহার করে একটি অনলাইন গ্রুপে পোস্ট দেয়। রিদ্ধিতা পাল লেখেন, তার বাসার স্বামী পরিত্যক্ত কাজের মহিলার একটি বাচ্চাকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে দত্তক দেওয়া হবে। এরপর সুজনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত ২১ এপ্রিল যোগাযোগ করে। এই সময়ে রিদ্ধিতা পাল নিজের ছেলে প্রনিল পালের ছবি সুজন সুতার কাছে পাঠিয়ে বলে, ‘এই ছেলেকে দত্তক দেওয়া হবে, আপনাদের পছন্দ হয় কিনা বলেন।’ ছবি দেখে সুজন সুতার শিশুটিকে পছন্দ করে এবং তাকে টাকার বিনিময়ে দত্তক নেবে বলে জানায়।”
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরবর্তীতে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় রিদ্ধিতা পাল নিজেকে অর্পনা দাস ও আসামী পীযূষ কান্তি পাল নিজেকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দিয়ে তার বাসার কাজের মহিলার শিশু হিসেবে অপহৃত সিদ্দিককে একটি স্ট্যাম্প তৈরি করে হাত বদল করে। এ সময় প্রমাণ স্বরূপ প্রনিল পালের টিকা কার্ড, রিদ্ধিতা পালের জন্মসনদ এবং বিজন বিহারী পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি দেওয়া হয়।’
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অপহৃত শিশু বিক্রিতে সহায়তাকারী সুজন সুতার র্যাবকে জানান, তার নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও স্ত্রীর বড় বোন বেবি সরকার এর একটি সন্তান প্রয়োজন হওয়ায় পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালের কাছ থেকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে মো. সিদ্দিককে কেনে। এরপর গত ২৬ এপ্রিল রাতে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও বেবি সরকারকে শিশুটিকে গোপালগঞ্জে দিয়ে আসেন।’