অবকাঠামো নির্মাণ তদারকি করবে সিটি করপোরেশন
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় যেকোনো ভবনের নকশা এবং স্থাপত্য বিষয়ে অনুমোদন দিবে রাজউক। আর এসব স্থাপনা যথাস্থানে হচ্ছে কিনা অথবা রাজউক থেকে অনুমোদিত বিষয়গুলো যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করবে সিটি করপোরেশন।
আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সারা দেশে ডেঙ্গু এবং মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান এলজিআরডিমন্ত্রী।
মন্ত্রী জানান, ভবন বা অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে রাজউক থেকে অনুমোদন নেওয়ার পর বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে অবহিত করতে হবে। ভবন নির্মাণে যে স্থান নির্ধারণ করা আছে সেটি সরকারি জায়গা বা উপযুক্ত কি-না, রাজউক থেকে যে নকশা বা ডিজাইন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না, এসব বিষয় দেখভাল করবেন সিটি করপোরেশন।
তিনি বলেন, ১৪তলা ভবনের অনুমতি নিয়ে ২০তলা নির্মাণ করা হয়। আবার তিন হাজার স্কয়ার ফিটের অনুমতি নিয়ে ছয় হাজার স্কয়ার ফিট বানানো হয়। এসব বিষয় সিটি করপোরেশন নজরদারি করবে। পরিকল্পিতনগরী গড়তে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
মোহাম্মদপুরের বছিলায় খাল দখল প্রসঙ্গে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সেখানে খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। সিটি করপোরেশন যদি জানতো তাহলে অবশ্যই এসব নির্মিত হতো না। আর হলেও তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যেত। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে শহর গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগর গড়তে এর বিকল্প নেই। কাউকে হয়রানি করার জন্য এসব করা হচ্ছে না।
এর আগে সভায় সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গুসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সকল নাগরিককে ভূমিকা পালন করতে হবে। রেলওয়ে, সিভিল এভিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে কাজ করতে নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলে সমস্যা সমাধান করা সহজ হবে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, বাড়ি-ঘর, অফিস আদালত, রাস্তা-ঘাট, ড্রেন, খাল-নালা সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, খুব শিগগিরই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। আশা করি যেখানে-সেখানে আর বর্জ্য পড়ে থাকবে না।
মন্ত্রী বলেন, এডিসসহ অন্যান্য মশা প্রজনন বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো শুরু করতে হবে। মশার কোনো বর্ডার নেই। উত্তর সিটি করপোরেশনে মশা থাকলে দক্ষিণে হবে না অথবা এক বাসায় হলে অন্য বাসায় হবে না এমনটি না। মশা নিধন করতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। মশামুক্তনগরী গড়তে আমরা সবাই বদ্ধপরিকর। ছাদ বাগানে মশার যাতে প্রজনন না হয়, এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
সভায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র জানান, এডিস মশাসহ অন্যান্য মশা নিধনে চলতি বছরের জন্য পর্যাপ্ত কীটনাশক মজুদ রয়েছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে মেয়রগণ তাদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। এসময় অভিযান পরিচালনা করার জন্য বিগত বছরের ন্যায় এবছরও ১০ জন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আবেদন জানালে তা পদায়নের আশ্বাস দেন মন্ত্রী। সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আসাদুর রহমান কিরণ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।