অভিনেত্রী শিমু হত্যার ঘটনায় স্বামীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। কেরাণীগঞ্জ থানায় আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ মামলা করা হয়। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞতানামা আসামিও করা হয়েছে।
মামলাটি করেছেন রাইমা ইসলাম শিমু বড় ভাই হারুন অর রশিদ। বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন শিমুর মেজ ভাই শহিদুল ইসলাম খোকন ও কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সালাম মিয়া।
আবু সালাম মিয়া বলেন, ‘আমরা বিস্তারিত তদন্ত করছি। তদন্তে আর কারও নাম এলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামিকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। রিমান্ডে নিয়ে তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
শহিদুল ইসলাম খোকন বলেছেন, ‘আমার বড় ভাই বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলীম নোবেল, নোবেলের বন্ধু ফরহাদ ও আরেকজনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। তবে, আরেকজনের নাম এখনি বলতে চাচ্ছি না আমরা। কারণ, তিনি পালিয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামিও আছে।’
এর আগে দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার তাঁর নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ‘পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের জন্য এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। শিমুর স্বামী এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন।’
মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘শিমুকে হত্যার দায় প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন তাঁর স্বামী নোবেল। আমরা জানতে পেরেছি, পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের জন্য এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো কারণ আছে কি না, বিস্তারিত তদন্তে আমরা স্পষ্টভাবে জানতে পারব।’
মারুফ হোসেন সরদার আরও বলেন, ‘কেরাণীগঞ্জের আলিয়াপুর ব্রিজের নিচে শিমুর লাশ উদ্ধারের ঘটনাস্থলের সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং তাঁর কলাবাগানের বাসার সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা সন্দেহজনকভাবে তাঁর স্বামী নোবেল ও নোবেলের বন্ধু ফরহাদকে রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসি। তাঁদের বক্তব্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাঁদের সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়। এর প্রেক্ষিতে আমরা তাঁদের আটক করি।’
ঢাকার পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরেছি যে, ফরহাদ শিমুকে গুম করার কাজে সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া আর কেউ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কি না, তা বিস্তারিত তদন্ত না করে বলা যাবে না। লাশটি আলিয়াপুর ব্রিজের ওখানে ফেলা হয়েছে গুম করার জন্য। আর কোথায় হত্যাকাণ্ডটি করা হয়েছে, বিস্তারিত তদন্ত না করে বলা যাবে না। এ ছাড়া যেকোনো হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যদি বিস্তারিত বলা হয়, তাহলে বিভিন্ন অপরাধীরা ওইভাবে হত্যাকাণ্ড করার চেষ্টা করতে পারে।’
গত রোববার সকাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন রাইমা ইসলাম শিমু। ওইদিন রাতেই কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলীম নোবেল। জিডিতে নোবেল দাবি করেন, ‘গত রোববার অনুমানিক সকাল ১০টার দিকে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত (জিডি করার সময় পর্যন্ত) বাসায় ফেরেনি। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
এরপর গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের আলিয়াপুর ব্রিজের নিচ থেকে রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর শিমুর স্বামী নোবেল ও ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তারা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বলে দাবি করে পুলিশ।