অর্থপাচার : রুলের জবাব না দেওয়ায় হাইকোর্টের উষ্মা
সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাচার করা অর্থ অবিলম্বে ফেরত আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি রুলের ওপর আট মাসেও জবাব দিতে বিবাদীরা ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত বলেছেন, ‘রুলের জবাব দিতে এত দেরি হলো কেন? ১৩ বিবাদী আট মাসেও প্রতিবেদন না দেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন আদালত।
বিদেশে অর্থপাচারের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে শুধু পুলিশের মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেওয়ার পর আজ রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ অন্যদের প্রতিবেদন দিতে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান।
বিদেশি ব্যাংক, বিশেষত সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
রুলে সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে বাংলাদেশের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোনো সত্তা কে কত টাকা পাচার করেছে, পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এ মামলায় ১৪ নম্বর বিবাদী ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। এ আদেশ অনুসারে সিআইডির দেওয়া এসব তথ্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষে গত ১২ জুলাই অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা এবং ১০১ মিলিয়ন ইউএস ডলার পাচারের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা থেকে ৩৪ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। বাকি অর্থ উদ্ধারে যেসব দেশে পাচার হয়েছে, তাদের মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের মাধ্যমে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারত ও ফিলিপাইনে পাচার করার কথাও বলেছে সিআইডি। এর মধ্যে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা থেকে ৩৪ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আজ রোববার প্রতিবেদন গ্রহণ করে আদালত বলেন, কেন আদালতের আদেশ প্রতিপালন করা হয়নি? শুধু পুলিশ আদেশ প্রতিপালন করেছে। বাকিরা কোথায়? এটা ঠিক নয়। আমরা কোর্ট একটা আদেশ দিলাম। আমরা রুল দিয়েছি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। প্রায় এক বছর হয়ে গেল রুলের জবাবটাই দাখিল করা হলো না। আর কী বলব? এ নিয়ে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
পরে আদালত অর্থসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাণিজ্যসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রারকে আগামী ২১ নভেম্বর জবাব দাখিলের জন্য দিন ঠিক করে দেন।