অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে করোনার টিকা নিতে হবে
বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দ্রুতই চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। টিকা চলে আসার পর তা বিতরণ কার্যক্রমও শুরু করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে অ্যাপের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষকে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে এই টিকা নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আজ শনিবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, ‘অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিতে হবে। রেজিস্ট্রেশন কখন করতে হবে, তা আমরা জানিয়ে দেব।’
সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, কখন কোথায় ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, তা অ্যাপের মাধ্যমেই মনিটরিং করা সম্ভব। এজন্য অ্যাপ তৈরির কাজ শেষপর্যায়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম তিন মাসের মধ্যে করোনার টিকা পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী, সামনের সারিতে থাকা পেশাজীবী ও বয়স্করা। বাদ যাবে ১৮ বছর বয়সের নিচে থাকা শিশুরা।
এদিকে দেশে করোনার টিকা আসার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এর বিতরণ কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সরকারের গঠিত কোভিড-১৯ জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘করোনার টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটিই অনুসরণ করা হবে বাংলাদেশে। স্বাস্থ্যকর্মীরা সবার আগে পাবেন। একই সঙ্গে বয়সভিত্তিক যেটা শুনেছি—৮০ বছরের ওপরে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ আছেন, তারা প্রথম গ্রুপেই পাবেন। আবার পুলিশ বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের কিছু মানুষ, তারপরে গণমাধ্যমের কিছু মানুষ—মূলত যারা ফ্রন্টলাইনার, তারা প্রথম দিকেই পাবেন।’
করোনার জন্য বয়স্ক ব্যক্তিরা ছাড়াও ঝুঁকির মধ্যে আছে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। ওই সব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে দেশের বাস্তবতায় কিছু জটিলতাও রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘কো-মর্বিডিটি (বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত) যেহেতু আমাদের দেশে রেকর্ড কিপিংটা ওরকম না, সেজন্য ওটা বয়স ভিত্তিকের মাধ্যমে ইনডাইরেক্টলি কাভার করা হবে। ফেইজ ওয়ান যদি প্রথম তিন মাস হয়, তাহলে ওই সময়ে আমরা ৭৫ লাখ লোককে দিয়ে ফেলতে পারব।’
এদিকে, সাধারণ মানুষ হিসেবে কীভাবে এই টিকা পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করবে, সেটিরও একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের লিস্টটা আমরা আইসিটি মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। একটি অ্যাপের মাধ্যমে তারা রেজিস্ট্রেশন করবে। এটা হয়তো আগামী সপ্তাহের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। রেজিস্ট্রেশন করতে হলে তখন জাতীয় পরিচয়পত্রটাও লাগবে। যেহেতু আমরা ১৮ বছরের নিচে ভ্যাকসিন ইস্যু করব না, সেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্র এখানে লাগবে। হতে পারে এক থেকে দুই শতাংশের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকবে না। সেখানে জন্ম নিবন্ধনটাকে আমরা অগ্রাধিকার দেব। আপনি যখন রেজিস্ট্রেশন করবেন, সঙ্গে সঙ্গে আপনার ডাটা আমাদের কাছে চলে আসবে। আপনি কোথায় কখন ভ্যাকসিন পাবেন, সেই তথ্যও আপনি জানতে পারবেন।’
করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় কারা থাকবেন না, সেটিরও একটি হিসাব করে রাখা হয়েছে পরিকল্পনায়।
ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘খুব কম সংখ্যক কিছু লোক হয়তো পাওয়া যাবে, যারা বলবেন, আমরা টিকা নেব না, তাহলে তারা বাদ। ২ নম্বর হলো, কারো যদি খুব অ্যালার্জি থাকে—হয় সে বাদ যাবে, অথবা স্পেশাল অ্যারেঞ্জমেন্টের মাধ্যমে তাকে টিকা দেওয়া হবে।’