আইএসের হুমকি, ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার : ডিএমপি
খ্রিষ্টীয় নতুন বছরে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার এবং বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হুমকির কারণে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাতে গুলশান-২ গোলচত্বরে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘এই বিধিনিষেধের মধ্যেই ঢাকায় নতুন বছর উদ্যাপন করছেন নগরবাসী।’
পুলিশের পক্ষ থেকে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। যদিও দেখা গেছে, রাজধানীবাসী প্রথম প্রহরে আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন। অবশ্য এসব কারণে রাজধানীতে পাঁচ থেকে সাতটি জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করায় এসব এলাকায় যানজটও দেখা গেছে। মহাখালী, তেজগাঁও এলাকায় মধ্যরাতে থেমে থেমে যানবাহন চলছে। আমতলী দিয়ে গুলশানে প্রবেশের ক্ষেত্রে দফায় দফায় পুলিশের তল্লাশি চলছে। ফলে আমতলী থেকে গুলশান-১ সড়কে যানজট রয়েছে।
আইএসের হুমকির বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে একটা বার্তা পাওয়া গেছে। আইএস নতুন বছর বরণ বা বর্ষপূর্তির আয়োজনকে বিধর্মীদের অনুষ্ঠান মনে করে। মুসলমানদের যেকোনো দেশে এ ধরনের অনুষ্ঠান হলে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে তারা। এটা বৈশ্বিক হুমকি। তারা অনুসারীদের বলেছে, যে যেখানে আছেন, যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা নিয়ে যেন হামলা চালায়।’
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মনে করি না বাংলাদেশের জন্য এটা হুমকি। এটা (এ হুমকি) কোনো গুরুত্ব বহন করে না। কারণ, এখানে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপরও অত্যুৎসাহী দু-একজন যদি হামলা করে, সে আশঙ্কা থেকে নিরাপত্তা বেশ জোরদার করা হয়েছে।’
এদিকে, শুক্রবার রাতে গুলশান-২ নম্বর চত্বরে থার্টি ফার্স্ট নাইটের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা থার্টি ফার্স্ট নাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করছি। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণে একযোগে কাজ করছি। থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে র্যাবের গোয়েন্দা ও আভিযানিক দল প্রস্তুত রয়েছে। আজ রাতে ঢাকা ও ঢাকার বাহিরের বিভিন্ন র্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ানের সদস্যদের পোশাকে এবং সাদা পোশাকে নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের সাইবার মনিটরিং টিম সাইবার ওয়ার্ল্ডে তাদের নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং কূটনৈতিক এলাকায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা চেকপোস্ট বসিয়েছি। চেকপোস্টে প্রয়োজন মনে হলে তল্লাশি করা হচ্ছে।’
র্যাব ডিজি বলেন, ‘ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার এবং কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের টহল টিমসহ গোয়েন্দা দল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা বনানী, গুলশান ও বারিধারা এলাকার সম্মানিত নাগরিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুশৃংখল রাখতে তাদের সহযোগিতা কামনা করছি।’
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আমরা আশা করব কেউ উচ্চস্বরে হর্ন বাজিয়ে নাগরিকদের বিরক্ত ও বিব্রত করার চেষ্টা করবেন না। যদি কেউ করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদের টিম প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া অনেককে দেখা যায় দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে মানুষকে বিরক্ত করে। তাদের বিরুদ্ধেও আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কেউ যেন নারীদের ইভটিজিং করতে না পারে সেজন্য আমাদের সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
র্যাব ডিজি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জঙ্গি হামলার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো ধরনের নেতিবাচক তথ্য নেই। তারপরও যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। যাতে করে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি ঘটলে আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হই। র্যাবের হেলিকপ্টার, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড ও ক্রাইম সিন ভ্যানসমূহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে কৌশলগত স্থানে। যেন যেকোনো প্রয়োজনে পরিস্থিতিতে আমরা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হই। এ ছাড়া যেকোনো বিশৃঙ্খলা পরিবেশ দেখা দিলে আমাদেরকে জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কিন্তু কোনো অনুষ্ঠান করতে বাধা দেইনি। অনুষ্ঠান হবে, তবে সুশৃংখলভাবে। এর আগেও থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে অনেক ঘটনা ঘটেছে যেটি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আনন্দ উচ্ছাস করতে সরকার বা আমরা কখনোই বাধাগ্রস্ত করি না। আমরা সবাই উচ্ছ্বাস করব কিন্তু আরেক জনকে বিরক্ত বা বিব্রত করে নয়। সবকিছুর মধ্যে বুঝতে হবে আমার যে সীমাটা, আমি কতটুক পর্যন্ত যেতে পারি।’