আইনমন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের ‘ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতার’ বহিঃপ্রকাশ : বিএনপি
জাতীয় সংসদে গতকাল বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে সরকারের ‘ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতার’ বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাদের এমন বক্তব্য শোভনীয় নয়।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এসব কথা বলেন।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বুধবার জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তিনি তাঁর বক্তব্যে ‘দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই’ বলে যা উল্লেখ করেছেন তাতে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আইনমন্ত্রী ‘দোষ স্বীকার করে ক্ষমা না চাইলে বিদেশে যাওয়ার’ সুযোগ দেখছেন না, কিন্তু খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে আবেদন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘সরকার যে শর্তে তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন, সেই শর্ত শিথিল করলে খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে আইনগত কোনও বাধা থাকে না। এটা নির্ভর করছে একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর’ এবং তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সরকার বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে’। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে সে সময় ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু দুই/একদিন পরই তিনি ইউটার্ন নিয়ে বলেছেন, ‘সম্ভব নয়’ এবং এখন বলছেন ‘ক্ষমা চাইতে হবে’।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, এগুলো সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রিত ও কলুষিত করার ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। যিনি কোনও অপরাধই করেননি, তাঁর ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে, যা ভ্রষ্টাচার ছাড়া কিছুই নয়।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকার যখন যেটা মনে করে তখন সেটি জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং একইসঙ্গে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়। বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। আমরা আইনমন্ত্রীর সংসদে প্রদত্ত বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা এই নেতা বলেন, ২০০৮ সালে ১/১১-এর সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার মামলাগুলো বিভিন্নভাবে শেষ করে। অপরদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলাগুলো জিঁইয়ে রাখা হয় এবং ১/১১-এর সরকারের দায়ের করা চারটি মামলার সঙ্গে পরে আরও ৩২টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে সেগুলোকে তড়িঘড়ি করে বুলেটের গতিতে চূড়ান্ত রায়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর মধ্য থেকে দুটি মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ফরমায়েসি রায় দিয়ে তাঁকে ২৫ মাস অন্যায়ভাবে আটক রাখা হয়। এমনকি তাঁর জামিনের ন্যায্য অধিকারও কেড়ে নিয়ে কারাবাস দীর্ঘায়িত করা হয়।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এবং সেটি আবার পুনর্বিবেচনা করা যায় না। ‘শর্ত মেনে মুক্ত করা হয়েছে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সরকার নিজেই এই শর্ত সংশোধন করেছে। তাই আবার শর্ত সংশোধন কিংবা শিথিল করা যাবে না- এই বক্তব্যটি সঠিক নয়। সিআরপিসির ৪০১ ধারায় বিষয়টি উন্মুক্ত আছে। সরকার যেকোনও শর্ত পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। তা একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।