আইনের শিক্ষার্থী হাসিবুর, জঙ্গি হলেন যেভাবে
নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিবকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
অনলাইনে জঙ্গিবাদের কথিত ত্রিরত্ন’র একজন এই হাসিবুর। তাকে গ্রেপ্তার করায় অনলাইনে জঙ্গিবাদের প্রচারণা ৮০ শতাংশ কমে আসবে বলে দাবি করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
আসাদুজ্জামান বলেন, হাসিবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকায়। তিনি রাজধানীর একটি বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি’র (আইন) শিক্ষার্থী। এর আগে অনলাইন প্রচারণার ‘ত্রিরত্নের দুই রত্ন’ আল আমিন সিদ্দিকী ও জোবায়দা সিদ্দিকী নাবিলাকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।
আসাদুজ্জামান বলেন, হাসিবুর রহমান মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি হন। উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নকালে সহিংস উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের আদর্শে দীক্ষিত হন তিনি। এই সময়ে তিনি বিপুল পরিমাণে উগ্রবাদী বই পড়তে শুরু করেন। হাসিবুর রহমান নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হাসিবুর রহমান প্রথমে আনসার আল ইসলাম এবং আন্তর্জাতিক সহিংস উগ্রবাদী সংগঠন আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী ফেসবুক আইডি জামিল হাসান ও জামশেদ হোসেইনের মঙ্গে যুক্ত হন। এই আইডি দুটিতে তালেবান ও আল কায়েদার বিভিন্ন লেখালেখি হতো। তাদের বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করানো হতো। হাসিবুর রহমান তাদের লেখা ও মতাদর্শে আগ্রহী হন।
২০১৯ সালের দিকে হাসিবুর রহমান আল কায়েদা ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। এসব লেখালেখির জন্য তিনি ‘আযযাম আল গালিব’ নামে ফেসবুক আইডি খোলেন। এই নামে তিনি একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলে ফেসবুক ও টেলিগ্রামে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার সমর্থনে লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি ফেসবুকে মুয়াহিদ মুসলিম নামে আরও একটি পেজ ওপেন করেন। সেখানে তিনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে সদস্য সংগ্রহ করতে থাকেন। এই পেজটি থেকে উগ্র মতবাদ ছড়ানোর অভিযোগে তার পেজটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রাখে। এসব দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, সর্বশেষ হাসিব, আব্দুল্লাহ গালিব আযযাম নামে একটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতেন। কারাগারে থাকা আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জামিনের জন্য তিনি গোপনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহেরও কাজ করতেন।
হাসিবুর রহমানের সঙ্গে টেলিগ্রামে একই মতাদর্শ প্রচারকারী ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্ন ইসা’ নামে আইডি পরিচালনাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারা একত্রে সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেন। হাসিবুর রহমান ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসার’ সঙ্গে আনসার আল ইসলামের মতদর্শ প্রচারের তথাকথিত ‘ত্রিরত্ন’র প্রধান হিসেবে অনলাইন র্যাডিক্যালাইজেশনের নেতৃত্ব প্রদান করতেন বলেও জানান আসাদুজ্জামান।