আওয়ামী দুঃশাসনে জনগণ অসহায় : রিজভী
ক্ষমতাসীন সরকারের দুঃশাসন আর সিন্ডিকেটের কারণে জনগণ অসহায় মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশ চলছে মাফিয়া শাসনের অধীনে। এখানে আইনের কোনো বালাই নেই। হবু চন্দ্র রাজার গবু চন্দ্র মন্ত্রীরা যা খুশি বলছে ও করছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। পরে অর্পণ সংঘের উদ্যোগে যুবদলের সাবেক নেতা মরহুম জিএস বাবুলের স্ত্রীর হাতে অর্থসহায়তা তুলে দেন রিজভী।
এসময় রিজভী আরও বলেন, উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুর ওপর নেমে ছবি তোলা যাবে না। ছবি তোলায় কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে। অথচ কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজের ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সেলফি তুলেছেন। আসলে এক দেশে দুই আইন চলছে। দেশে নির্বাচিত সরকার থাকলে তারা আইন মানতো। তারা তো অনির্বাচিত। সেজন্য যখন যা মন চায় তারা তাই করছে।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে জনদুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, মাফিয়া আওয়ামী লীগের লোকেরা সিন্ডিকেট করে দিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে। আজকে সিন্ডিকেট এমনভাবে চেপে বসেছে মানুষ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। কোরবানির হাটেও সিন্ডিকেট করছে আওয়ামী লীগের লোকজন। সরকারদলীয় লোকেরা ইচ্ছেমতো দাম বৃদ্ধি করে ক্রেতাদেরকে পশু কিনতে বাধ্য করছে।
লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন এতো লোডশেডিং কেনো? প্রধানমন্ত্রীর সব কথা দ্বিচারিতামূলক। তিনি নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন। তাহলে লোডশেডিং কেনো? আসলে তিনি চান নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, কদিন আগেও বলেছেন। এধরনের কথা তো ফেরাউনরা বলে। আসলে আপনি জনগণের সাথে সৎ মায়ের ভূমিকা পালন করছেন। আপনি একচ্ছত্র ক্ষমতা চান। কিন্তু ক্ষমতা তো আসে জনগণের কাছ থেকে। সেটা তো আপনার নেই। আপনি নতুন নতুন প্রকল্প করেন টাকা পাচার করার জন্য।
রিজভী বলেন, নিজের আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে কুইক রেন্টালের সুযোগ দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছেন বিদ্যুৎ খাত থেকে। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। আপনি উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করে যে টাকা পাচার করেছেন তার কুফল মানুষ এখন ভোগ করছে। আজকে বিদ্যুৎ খাতে জনগণের ভর্তুকির টাকা হরিলুট করা হয়েছে। বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসে নয়-ছয় হয়েছে। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনে নজর দেয়নি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সরকারের সমালোচনা করে বলেন, উন্নয়নের নামে হৈ চৈ করে এতো লাফালাফি করলেন কোথায় আপনার বিদ্যুৎ? আপনাকে দেশবাসী আর সহ্য করবে না। আপনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে চলেছেন। কোথায় দশ টাকার চাল? কোথায় ঘরে ঘরে চাকরি? আজকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকার তথা কর্মহীন লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে। আপনি ক্ষমতায় থাকা মানে মানুষ না খেয়ে থাকা। আপনি ক্ষমতায় থাকা মানে কর্মহীন থাকা। আজকে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে বিভিন্ন কালাকানুন করেছে সরকার।
রিজভী বলেন, আপনি গোটা দেশকে গ্যাস চেম্বারে পরিণত করে মহারানির মতো দেশ চালাচ্ছেন। যাতে কেউ টু শব্দ করতে না পারে। সেজন্য দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখেছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছেন। আপনি তারেক রহমানকে বঞ্চিত করছেন। তবুও তারেক রহমান সুদূর লন্ডন থেকে দেশের জন্য কাজ করছেন। তিনি জনগণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বন্যার্তদের জন্য তিনি সার্বক্ষণিক খবর রাখছেন। দলের নেতাকর্মীরা বন্যার্তদের পাশে উপহার সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ ঈদের প্রাক্কালে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে হাপিত্যেশ করছে। সরকার জনগণের সাথে তামাশা করছে। মানুষ বন্যার পানিতে ভাসছে তাদের দিকে সরকারের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। তারা পদ্মা সেতুর জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত।
রিজভী বলেন, বর্তমান দানব অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ডা. জাহেদুল কবির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ও অর্পণ সংঘের বীথিকা বিনতে হোসাইন, ওমর ফারুক কাওসার ও আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ।