আওয়ামী লীগ চাপে পড়ে ভদ্র হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল
নির্বাচনের আগে দেশে-বিদেশে চাপে পড়ে আওয়ামী লীগ ভদ্র হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে আজ শুক্রবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “তারা (আওয়ামী লীগ) দেখাচ্ছে যে, বিরোধী দলগুলোকে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দিচ্ছি। গতকাল আমরা সমাবেশ করেছি, সেখানে খুব বেশি ঝামেলা করেনি। আজ আমরা এখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করছি। চারদিকে পুলিশ ভাইয়েরা আছে, কিন্তু ঝামেলা করছে না। কারণ একটাই, তারা দেখাচ্ছে—‘আমরা তো গণতান্ত্রিক দল। আমরা কোনো ঝামেলা করি না।’ এটাই প্রতারণা। এরা প্রতারক দল। গত ১৫ বছরে তারা বিএনপির ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমকে তারা গুম করেছে। সহাস্রাধিক নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে। ভোলায় বিনা কারণে গুলি করে দুজন তরুণ নেতাকে হত্যা করেছে।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আজ এ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। ব্যাংক খালি হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও এখন লুট হয়ে যায়। কিছুদিন আগে দেশকে সিঙ্গাপুর-মালেশিয়া হয়ে যাচ্ছে বলে দেখাচ্ছিল। এখন রিজার্ভ নামতে নামতে নিচের দিকে নামতে শুরু হয়েছে। এখন আবার বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে লোন চাচ্ছে। এরা চুরি করে ডাকাতি করে দেশের সব সম্পদ পাচার করেছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। নিজেরা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তত্ত্বাবধায়ক বিধান, যেটা সংবিধানে ছিল, যাতে নির্বাচন হয়েছিল, অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে এ দেশের মানুষ শান্তিতে ভোটের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন দেখতে পেত। বলা যেতে পারে—একটি স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। আজ সে ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আবার দলীয় সরকার নিয়ে এসেছে।’
এ ছাড়া মির্জা ফখরুল বলেন, “এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে সরকার গঠন করেছে। ২০১৮ সালে আগের রাতে ভোট নিয়ে ক্ষমতায় চলে গেছে। আবার নতুন করে পায়তারা শুরু করেছে। নতুন করে সে ধরনের একটি নির্বাচন দিয়ে তাদের আবার ক্ষমতায় আনবে বলে। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বলেছে—‘আমরা ইভিএম মেশিন চাই ৩০০ সংসদীয় আসনে।’ ইভিএম নাকি তারা চেতনায় ধারণ করে। কারণ, ইভিএম মেশিন ছাড়া তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো উপায় নেই। অথচ ইভিএম মেশিন একটি জালিয়াতির যন্ত্র। আপনারা ভোট দেবেন ধানের শীষে, ভোট চলে যাবে নৌকায়। এবং এটাই একমাত্র কারণ, যে কারণে তারা এ মেশিনটাকে নির্বাচনে চায়।”
‘দেশের কী অবস্থা, তা নতুন করে বলার দরকার নেই’ মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই যে বাসে আমার ভাইয়েরা যাচ্ছে, তাদের জিজ্ঞাসা করুন, তাদের কত টাকা বেশি দিতে হচ্ছে? জিজ্ঞাসা করুন, একজন রিকশা শ্রমিক ভাইকে—এক বেলা ভাত খাওয়ার জন্য তাঁকে কত টাকা বেশি খরচ করতে হয়? জিজ্ঞাসা করুন আমার কৃষক ভাইকে—এখন ফসল উৎপাদনের জন্য কত টাকা বেশি ব্যয় করতে হয়? জিজ্ঞাসা করুন মধ্যবিত্ত কিংবা ছোটখাট চাকরি করেন, আমার সেই ভাইকে—সংসার চালাতে পারছেন কি পারছেন না? জিজ্ঞাসা করুন শিক্ষক-অধ্যাপকদের—তাঁরা সংসার চালাতে কীভাবে হিমশিম খাচ্ছেন। অত্যন্ত কষ্টের একটা ব্যাপার দাঁড়িয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছে মধ্যবিত্তরা। কারণ, তারা বলতেও পারে না, সইতেও পারে না।”
বর্তমান সরকার পুরোপুরি ডাকাত এবং চুরি করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সরকার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো অবস্থান নিয়েছে। তাদের সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই।’