আগস্টের শেষ দিনেও টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শোকার্ত মানুষের ঢল
শোকের মাস আগস্টের শেষ দিনেও শোকার্ত মানুষের ঢল নেমেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে। বুধবার সকাল থেকেই শোকার্ত মানুষ বঙ্গন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে।
এ বছরের আগস্ট মাস জুড়েই বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শোকার্ত মানুষের সমাগম ছিল সবচেয়ে বেশি। আগস্টের প্রথম দিন থেকেই বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। এটি শেষ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। শোকার্ত মানুষ টুঙ্গিপাড়ায় এসে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শোকাবহ আগস্টের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্য শোকাশ্রুপাত করেছেন। শোকাবহ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সচিব, বিভিন্ন দপ্তর, বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
চট্ট্রগামের রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা আলহাজ মোজাফফর হোসেন (৬৫) বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়া আমাদের আবেগের জায়গা। এখানে আসলে আমরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। পিতা এখানেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। এখানেই ঘুমিয়ে আছেন। তাই টুঙ্গিপাড়া এখন আমাদের তীর্থভূমি। শোকের মাসে টুঙ্গিপাড়া এসে শোকাবহ পরিবেশে পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। তাঁর জন্য দোয়া-মোনাজাত করেছি। আল্লাহর কাছে কেঁদেছি। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ঘটনা কারবালার ঘটনাকেও হার মানিয়েছে। তাই বিদেশে পলাতক খুনিদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।’
ময়মনসিংহের ফুলপুরের মোজাম্মেল হক (৫৫) বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শের নাম। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ একাত্ম। এটিকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গিপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে কবর দিয়ে তাঁকে চিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু খুনিদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে চিরন্তন বঙ্গবন্ধু আরও সজিব। তিনি আমাদের প্রতিটি লড়াই সংগ্রামে পথ দেখান। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সহস যোগান। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন চিরন্তন প্রেরণার উৎস হয়ে। তাই শোকের মাসে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকীতে এটাই আমদের অঙ্গীকার।’
বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধের কিউরেটর মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে হত্যা করে। ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে পিতা মাতার কবরের পাশে টুঙ্গিপাড়ায় সমাহিত করা হয়। ২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় নবনির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করতে বিদেশসহ দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন আসেন। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর ২০২২ সালের শোকের মাসে টুঙ্গিপাড়ায় সবচেয়ে বেশি মানুষের সমাগম হয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।’
সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা নওয়াব আলী বলেন, ‘এ মাসে গড়ে প্রতিদিন একশ সংগঠন বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন মন্ত্রী, এমপি, সচিব, বিচারপতি, সিটি করপোরেশন মেয়র, জেলা পরিষদের প্রশাসক, বিভিন্ন দপ্তর, বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শোকের মাস আগস্টে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এ মাসের ছুটির দিনগুলোতে শোকার্ত মানুষ টুঙ্গিপাড়ায় বেশি এসেছেন। প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ফাতেহা পাঠ করে বঙ্গবন্ধুসহ ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত করেছেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর জন্য অশ্রুপাত করেছেন।’
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তিনি টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করে আমাদের গর্বিত করেছেন। ঘাতকেরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু নিথর মৃত্যুহীন দেহ নিয়ে টুঙ্গিপাড়ার জন্ম মাটিতেই ফিরে আসেন। তাঁর সমাধিসৌধটি এখন অমর সমাধিসৌধ। প্রিয় নেতার প্রতি এ বছরের শেকের মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।’