আগে নৌ-কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল : হাইকোর্ট
‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যে নৌ-কর্মকর্তা ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন দিয়েছেন তাকে আগে গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত দুটি রিটের শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ, ব্যারিস্টার অনিক আর হক, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান ও অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান।
রিটের শুনানিকালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বলেন, ‘লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় সরকারের তো কোনো নিষ্ক্রিয়তা নেই।’
তখন আদালত প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনি বলছেন নিষ্ক্রিয়তা নেই? আপনার অফিসের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা না দেখেই তো লঞ্চের ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন। বিআইডব্লিউটিএর এক্ষেত্রে কি দায়িত্ব ছিল না?’
আদালত আরও বলেন, ‘যে নৌ-কর্মকর্তা ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন দিয়েছেন তাকে আগে অ্যারেস্ট করা উচিত ছিল।’
এরপর আদালত এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত সব তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ৩০ দিনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে লঞ্চ, জাহাজসহ অভ্যন্তরীণ নৌযানের ফিটনেস সংক্রান্ত সব তথ্য ৯০ দিনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া লঞ্চ দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কেউ আর্থিক সহযোগিতার জন্য আবেদন করলে স্ব স্ব জেলা প্রশাসককে তা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি লঞ্চ দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত ও নিহতদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার সেটাও আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারগুলোকে ৫০ লাখ এবং গুরুতর আহতদের ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে রিটে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটি প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে ঝালকাঠি শহরের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ আগুন লাগে। দ্রুতই আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে।
শীতের রাতে লঞ্চের বেশির ভাগ যাত্রী তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। তিন ঘণ্টার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন লঞ্চের অন্তত ৩৯ জন যাত্রী। আর প্রাণ বাঁচাতে লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল যারা, তাদের মধ্যে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।