আবরার হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় ১১ জন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আবাসিক হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বীকে (২২) নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতের সে ঘটনার পৈশাচিকতায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল দেশবাসী।
হত্যাকাণ্ডের দুই বছর এক মাস ২২ দিন পর গত ২৮ নভেম্বর ছিল মামলার রায় ঘোষণার দিন। পরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেন।
আজ বুধবার আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আবরারকে ২০১১ নম্বর রুমে নেওয়ার পরই তাবাখখারুল, সকাল ও রাফিদ তার মোবাইল ও ল্যাপটপ পরীক্ষা করতে থাকেন। তারা বলেন, আবরারের মোবাইলে ছাত্রশিবির সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। এটা শুনেই আবরারকে চশমা হাতে নিতে বলেন রবিন। আবরার তাঁর চশমা হাতে নিলে রবিন তাঁকে চড় মারতে শুরু করেন। এর পরপরই মোর্শেদ ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে এলে সকাল সেটা দিয়ে আবরারের পিঠ, পা, হাত ও নিতম্বসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্মমভাবে আঘাত করতে শুরু করে। এ সময় আসামি সকালের হাতের স্ট্যাম্পটি টুকরো হয়ে গেলে এহতেশামুল রাব্বি তানিম আরেকটি স্ট্যাম্প নিয়ে আসে। আসামি অনিক সরকার সেটা দিয়ে আবরারের শরীরে একটানা আঘাত করতে থাকে।
টানা মারধরে আবরার ফাহাদ রুমের মেঝেতে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুজাহিদুল ইসলাম ও শামীম বিল্লাহ স্কিপিং রোপ দিয়ে আবরার ফাহাদকে পিঠ ও পায়ে আঘাত করতে শুরু করে। আবরার তাঁকে মারধর না করার জন্য আকুতি-মিনতি জানালেও কেউ তা শোনেনি। মেফতাহুল ইসলাম জিয়নও স্ট্যাম্প দিয়ে আবরারকে মারতে থাকে এবং জিজ্ঞাসা করে, আবরার ছাত্রশিবির করেন কি না।
রাত ১১টার পর এস এম সেতু ২০১১ নম্বর রুমে এসে অন্যদের আবরার ফাহাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল ও মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সে (আবরার) কোনো তথ্য দিচ্ছে না। তখন সেতু অন্যদের বলেন, ‘মারতে থাক।’ ওই নির্দেশের পর আবরারকে আবারও পেটানো শুরু করে আসামিরা। এর সঙ্গে আবরারের শরীরে কিল-ঘুষি, লাথি মারতে থাকে তারা। আসামি মেহেদি হাসান রবিন ও অনিক সরকার রুম থেকে বের হওয়ার সময় উপস্থিত অন্যদের বলে, ‘তোরা ওর (আবরার) কাছ থেকে তথ্য বের কর।’
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ৭ অক্টোবর ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এরপর ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কার্যালয়ে আবেদন করেন মো. বরকত উল্লাহ। পরে ১২ মার্চ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আবরার হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ফাইল অনুমোদন করেন।