আমাকে ভোগানোর জন্য অসহায় মানুষদের ক্ষতি করবেন না : মাশরাফী
নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও নড়াইল-২ (লোহাগড়া-নড়াইলের একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মাশরাফী লিখেছেন, ‘আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ ও অসহায় মানুষদের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন।’
রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে মাশরাফী বলেন, ‘একটু বোঝার চেষ্টা করছি, আর কত দিক থেকে আক্রমণ হতে পারে।’
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলারর দিঘলিয়া এলাকার এক তরুণ তাঁর ফেসবুকে গত শুক্রবার বিকেলে ধর্মীয় অবমাননাকর একটি পোস্ট দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু লোক দিঘলিয়া বাজারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দোকানপাটে ও আশপাশের বাড়িঘরে হামলা চালান। একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং একটি মন্দিরে হামলা চালানো হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা করে এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এর আগে গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হেনস্তা করা হয়।
মাশরাফী তাঁর ফেসবুক পোস্টে বলেন, “প্রথম আক্রমণের কথা হয়তো সবাই ভুলে গেছেন, তাই মনে করিয়ে দিচ্ছি। তারা প্রথম ঝামেলা করল মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে। তাঁকে যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা দিল, ঠিক সে সময় তাঁকে ওয়াজ করার জন্য নড়াইলে আমন্ত্রণ জানানো হলো। নিয়ম অনুযায়ী—যখন ওয়াজ মাহফিল হয়, সেটার পারমিশন (অনুমতি) দিয়ে থাকে জেলা প্রশাসন, নিরাপত্তার ব্যাপার দেখেন পুলিশ প্রশাসন। অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়া অথবা নিরাপত্তার বিষয়ে সংসদ সদস্যের এখানে কোনো দায়িত্ব নাই। জেলা প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসন বা আয়োজকদের পক্ষ থেকে থেকে আমাকে বিন্দুমাত্র না জানিয়ে ওয়াজ মাহফিল দেওয়া হলো নোয়াগ্রামে, যেখানে আমার শ্বশুরবাড়ি। বক্তাকে আগেই বলা হলো যে, ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি নেওয়া আছে, আপনি চলে আসেন। অথচ কালনা ঘাট পর্যন্ত আনার পর তবেই কেবল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানানো হলো। ঘাট থেকে যখন ওনাকে বলা হলো যে, ‘আপনার চিঠি কোথায়?’ তিনি দিতে পারলেন না। মাহফিল কর্তৃপক্ষ তখন আমাকে ফোন করে বলল, ‘আপনি এই সমস্যা ঠিক করেন।’ কথা হলো—তখন এ সমস্যার সমাধান করা কীভাবে সম্ভব? এটা তো পুরোটাই একটা প্রক্রিয়া, যা আরও সাত দিন আগে থেকে করতে হয়!”
‘তখন ওই লোকগুলো বলা শুরু করে দিল—আমি নাকি ওয়াজ মাহফিল হতে দিচ্ছি না। পুরো খেলাটা খেলেছে এমনভাবে, তাঁকে আমার নির্বাচনি এলাকায়—আমার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় এনে সরকারের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, আমি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মানছি না। আর, যদি না আসতে পারে, তাহলে প্রচার করা হবে যে, মাশরাফী ওয়াজ করতে দেয় না। দুই দিক থেকেই তাদের জয়। আর দুই পক্ষের কাছেই আমাকে খারাপ বানাবে’, যোগ করেন মাশরাফী।
‘তবে যাই হোক, আল্লাহ মালিক, সত্য আর চাপা থাকেনি। সবাই কমবেশি জেনেছে সত্যিটা, আর যারা জানে না, তারা ভুল বুঝেই আছেন।
‘এবার উলটো খেলা খেলল তারা। সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের ওপর আক্রমণ করে তাদের বিপদে ফেলা, পাশাপাশি আমাকেও বিপদে ঠেলে দেওয়া।
‘এমনকি, কিছুদিন আগে কালিয়ার মির্জাপুরে সম্মানিত একজন শিক্ষককে অপমানের ঘটনায়ও আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে, অথচ ওটা আমার নির্বাচনি আসনের ভেতরই নয়।
‘যাক, আপনারা সব তো করলেন। এবার আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ—পেছন থেকে আঘাত করতে করতে আপনারা ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তো আসুন, সামনে থেকে আঘাত করুন। আমার সঙ্গে সরাসরি লড়াই করুন। আমি সাধুবাদ জানাব।
‘কিন্তু, আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ ও অসহায় মানুষদের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন।
‘আমি জানি, নড়াইলে রাজনীতি যাদের কাছে পেশা, তাদের কাছে আমি এখন নেশা...।’
মাশরাফী গত শনিবার বিকেলে দিঘলিয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি যান এবং তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।