‘আমার কোনো বক্তব্য নেই’, খোকনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের প্ররোচণায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুর্নীতি) তাঁর ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বলে গতকাল মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। আজ বুধবার গণমাধ্যমকর্মীরা এমন অভিযোগের জবাব জানতে চাইলে এড়িয়ে যান মেয়র তাপস।
ঢাদসিক মেয়র সরাসরি বলে দেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই, আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
সাপ্তাহিক নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজ বুধবার নগরীর ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিকাটুলী খেলার মাঠের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেয়র এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার জন্য মেট্রোরেল ও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন।
দুদক গত সোমবার জানায়, সাঈদ খোকনের তিনটি প্রতিষ্ঠানের তিনটি, স্ত্রী ফারহানা আলমের দুটি, বোন শাহানা হানিফের দুটি এবং মায়ের একটি ব্যাংক হিসাবসহ আটটি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ব্যাংক হিসাবগুলোতে অস্বাভাবিক বিপুল অর্থ লেনদেন হয়েছে এবং অর্থ উত্তোলন বা হস্তান্তর করা না যায় এ কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা।
এরপর গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন অভিযোগ করে বলেন, ‘নিজের সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকতে সীমাহীন বিদ্বেষ ও হয়রানিমূলক আচরণ করছেন তাপস। দুদকের এই কর্মকাণ্ড তাপসের প্ররোচনায় সংঘটিত হয়েছে।’
কেন এমনটি মনে হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমার বিশ্বাস জন্মেছে তাপসের ক্রমাগত প্ররোচনায় এমন কাণ্ড ঘটেছে। আপনি দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করলেই সেটি জানতে পারবেন।’
‘জলাবদ্ধতার জন্য মেট্রোরেল ও সমন্বয়হীনতা দায়ী’
কিছু কিছু এলাকায় সীমিত কিছু অংশে গুচ্ছাকারে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আজ মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আজ এখান থেকে আমরা শনির আখড়া যাব। শনির আখড়ায় আমরা কাজলা খাল উদ্ধার করেছি। কিন্তু তারপরও পানি নিষ্কাশন এখনো পুরোপুরি হচ্ছে না। সেখানকার প্রতিবন্ধকতা হলো, সেখানে প্রকল্প (মেট্রোরেল প্রকল্প) চলছে এবং সে প্রকল্পের কারণে পানি নিষ্কাশন সঠিকভাবে হচ্ছে না। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি, দেনদরবার করছি। আসলে ঢাকা শহরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে, সামগ্রিকতা চিন্তা না করে প্রকল্পনির্ভর কাজ করার কারণে সমস্যাগুলো রয়ে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে সমন্বয় করে কাজ করা যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার সমাধান করা যায়।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস আরও বলেন, উন্মুক্ত জায়গায় বর্জ্য ফেলাতে এবং যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী রাখাতে বা প্লাস্টিক জাতীয় বোতলগুলো ফেলাতে, সেগুলো গিয়ে নর্দমার মুখগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে এবং ভেতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা দেখছি, সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয়নি।
নগরবাসী জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রমের সুফল আগামী বছর থেকে পাওয়া শুরু করবে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। এ বছর সে কাজের সুফল না পেলেও আগামী বছরগুলোতে নগরবাসী তা পাওয়া শুরু করবে। অবকাঠামো উন্নয়নে যে কাজগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে, তা শেষ হলেই নগরবাসী ক্রমান্বয়ে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি লাভ করবে।
এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তাঙ্গনে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের উদ্বোধন এবং ফকিরাপুল মোড় হতে মতিঝিল পেট্রলপাম্প এলাকা পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে উন্নয়নকাজ ও নর্দমা পরিষ্কারকরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে তিনি রায়েরবাগ থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত কয়েকটি জলজট প্রবণ এলাকা পরিদর্শন এবং আজিমপুর শিশুপার্কের উদ্বোধন করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাফর আহমেদ, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের ও মুন্সি আবুল হাশেম, সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।