‘আমার ভাই ভবনের নিচে, ওর খুব কষ্ট হচ্ছে’
মেহেদী হাসান স্বপন। তিনি গুলিস্তানের বাংলাদেশ স্যানিটারি নামের একটি দোকানে কাজ করতেন। গতকাল যে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ওই ভবনের নিচতলাতেই তার দোকান। বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে বিকেল ৩টার দিকে বড় ভাই তানভীর হাসান সোহাগের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। সোহাগের সঙ্গে কথা বলার সময়ও স্বপন দোকানেই ছিলেন। এরপরই ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
এদিকে বড় ভাই স্বপন নোয়াখালী থেকে খবর পান গুলিস্তানের বিস্ফোরণের। সঙ্গে সঙ্গে ছোটভাই স্বপনের ফোনে কল দেন। কিন্তু, কল ঢোকেনি। দুঃশ্চিন্তা আরও কঠিন হতে থাকে। কয়েকবার ভাইকে ফোন দিয়েও পাননি। চারিদিকে যোগাযোগ করেন। কোনো হদিস মেলেনি। ঢাকায় যত আত্মীয়-স্বজন ছিল, তারাও খোঁজ করে পায়নি ছোট ভাইকে।
প্রাণপ্রিয় ছোটভাইয়ের হদিস না পেয়ে সোহাগ আজ বুধবার ভোরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থেকে রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। সকালে পৌঁছান। সঙ্গে ঢাকায় থাকা তাদের আত্মীয়-স্বজনও এসেছেন। সবার চোখে-মুখে বিষন্নতা। উদ্ধার কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের দল। তানভীর হাসান সোহাগ সেদিকে তাকিয়ে বিলাপ করছিলেন।
সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে বিলাপ করতে করতে তানভীর হাসান সোহাগ বলেন, ‘আমার ভাই ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছে। ভাইয়ের খুব কষ্ট হচ্ছে। আমারও কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ তোকে বাঁচিয়ে রাখুক ভাই।’
তানভীর হাসান সোহাগ বলেন, ‘গতকাল বিকেল ৩টার দিকে আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল। বিস্ফোরণের কথা জানার পরই আমি ওর ফোনে কল দিই। কিন্তু বন্ধ পাই। সব লোকজনকে জানাই। কেউ খোঁজ দিতে পারেনি। স্বপনের সঙ্গে আরও দুইজন দোকানে ছিল। তাদের নাম মির্জা আর আশিক। ওরা দুজনই শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। নেই শুধু স্বপন। ওরা কথাও বলতে পারছে না। তাই কিছুই জানতে পারছি না।’
সোহাগ আরও বলেন, ‘স্বপনের তাহমিদ আল হাসান মুনতাসির (১২) ও নুর জাহান (৬) নামের দুই ছেলে- মেয়ে আছে। তারা কান্নাকাটি করতে করতে পাগল হয়ে গেছে। তার স্ত্রীও কান্নাকাটি করছে। কি যে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। বলে বোঝানো যাবে না।’
সোহাগের চাচাত ভাই আবির। তিনিও বিস্ফোরিত ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এমন বিপদ যেন কারও না হয়। আমার ভাই ভবনের নিচে পড়ে আছে। আমরা আছি তার অপেক্ষায়।’