‘আমি বাজেট বুঝি না, পেট চললেই খুশি’
২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এ বাজেট ঘোষণার পর নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির চিন্তা একেকরকম। কেউ বলছেন, বাজেট নিয়ে তাদের চিন্তা নেই। আবার কেউ বলছেন, বাজেট যাই হোক ভালো থেকে পেট চালাতে পারলেই তারা খুশি।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থানরত বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
শাহ আলম একজন ভ্রাম্যমাণ পান-সিগারেট বিক্রেতা। তিনদিন আগে তিনি রাজবাড়ী থেকে ঢাকায় এসে শুরু করেছেন পান-সিগারেটের ব্যবসা। আজকের ঘোষিত বাজেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বাজেট বুঝি না। বুঝতেও চাই না। পেট চললেই খুশি। তিনদিন পান-সিগারেট বিক্রি করে চালান উঠছে শুধু। এক টাকাও থাকছে না। বিক্রি কম। খাব কী?’
মো. আলমগীর একজন রিকশাচালক। তিনি বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বেশি। সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে ৩০০ টাকা আয় করছি। লোকজন উঠে না তেমন রিকশায়। আমার দুই ছেলে-মেয়ে। দুজনই লেখাপড়া করে। ওদের খুব কষ্টে রাখতে হয়। বাজেট ঘোষণা করছে তাতে আমার কী? প্রতিবার বাজেটের পর দেখা যায়, গরিবের জন্য বাজেট হয় না। আমি গরিব মানুষের বাজেট চাই। আমার জন্য বাজেট চাই।’
আব্দুল করিম কারওয়ান বাজারের একজন মুদি দোকানি। তিনি বলেন, ‘আজ বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখনও তেমন কোনো জিনিসের দাম বাড়েনি। শুধু তেল আর ইন্ডিয়ান ডালের দাম বাড়ছে। দেখা যাক পরবর্তী কী হয়। আমি চাই, বাজেটে সবার ভালো হোক। এই করোনাকালে সবারই সমস্যা। আমরা যেভাবে পাইকারি বাজার থেকে জিনিস কিনব, সেভাবেই বিক্রি করব। সব কিছুর দাম নাগালে থাকুক। আমরা বিক্রি করে শান্তি পাই, আবার ক্রেতাও স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করতে পারুক।’
খলিল মিয়া একজন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক। রাস্তায় বসে বসে ভিক্ষা করছিলেন। বাজেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বাজেট সম্পর্কে বুঝতে চান। বলেন, ‘বাজেট কী, ভালো করে ভেঙে কন। আমি বাজেট দিয়ে কী করব? আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। আমার গ্রামের বাড়ি রংপুর। ১২ বছর ধরে আমি পঙ্গু হয়ে আছি। এলাকার মাতব্বরদের বলছিলাম, একটা প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিতে। আমার কাছে সাত হাজার টাকা চাইছিল। পরে আমি আর কার্ড করিনি। ওত টাকা আমি কই পাব? আমি বাজেটের হিসাব করে কী করব? এই দেশে গরিবের দেখার কেউ নেই।’
সালাউদ্দিন সাব্বির একজন চা-সিগারেটের দোকানি। তিনি বলেন, ‘বাজেট ঘোষণার আগেই গোল্ডলিফ সিগারেটের দাম দুই টাকা বেড়ে গেছে। পরে যে আর কী কী হবে, আল্লাহ জানে। আর বাজেটে সিগারেটের দাম বাড়লে আমার কোনো লাভ ক্ষতি নেই। যেমন দামে কিনব, তেমন দামে বিক্রি করব। এদেশে আর বাজেট কী, প্রতিবার ঘোষণার পরপরই দেখি; সব কিছুর দাম বাড়ে। তবে আমি চাই, সবকিছু মানুষের হাতের নাগালে থাকুক।’