আ.লীগনেতাকে মারধর করে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দিলো প্রতিপক্ষ
মাদারীপুরের রাজৈরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আবদুস সালামকে (৫০) মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মারধরের পর ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে রাজৈর উপজেলা পরিষদের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, বেলা একটার দিকে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আবদুস সালাম। কার্যালয়ে ঢুকতেই তাঁর মোটরসাইকেলের গতি রোধ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়াল।
এসময় হাসিবুলের ভাই আশিকুর রহমান পাভেলসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে খন্দকার আবদুস সালামকে বেদম পিটুনি দেন। একপর্যায়ে হাত-পা ধরে তাঁকে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেন। এ সময় তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, শোক দিবস উপলক্ষে গত বছরের ৩১ আগস্ট উপজেলার খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় খন্দকার আবদুস সালাম উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান ওরফে পল্লবীর সমালোচনা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ফরিদা হাসান বাদী হয়ে খন্দকার আবদুস সালামসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে মামলা করেন। এরই জেরে ফরিদার উপস্থিতিতে তাঁর দুই ছেলেসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে একা পেয়ে পিটুনি দেন।
আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার একটি জমির দলিল হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যাই। উপজেলায় প্রবেশ করার পরেই পল্লবীর উপস্থিতিতে আমার ওপরে অতর্কিত হামলা চালায় তার ছেলেরা। মারধর করে আমাকে পুকুরে ফেলে দেয়। পুকুরে নেমেও ওরা আমাকে মারধর করে। আমার পড়নে পায়জামা ছাড়া সব ছিঁড়ে ফেলেছে। পরে আমার মোটরসাইকেলটিও ওরা পুকুরে ফেলে দেয়। মারধরের সময় ওরা আমার কাছে যা ছিল সব নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়াল বলেন, ‘তিনি তো (খন্দকার আব্দুস সালাম) সিনিয়র মানুষ, তাকে কেন মারধর করবো? আমি শুনেছি, তিনি কোন এক লোকের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে পড়ে গেছেন। তার আগে কিছু ঘটছে কি না তা আমি জানি না।’
এ সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, ‘পল্লবী ও তার ছেলে পিয়াল এরা কেউ আওয়ামী লীগ বা দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে নেই। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান লীগের কর্মী। এরাই উপজেলায় হাঙ্গামা মারামারি করে পরিবেশ নষ্ট করে আসছে। আওয়ামী লীগে না থেকেও আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতাকে মারধর করে তার মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেওয়া জঘন্যতম দুঃসাহস। আমরা আইনিভাবে এই ঘটনার বিচার দাবি করছি। একইসঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
এ সম্পর্কে রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘রাজৈরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অন্যটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের। মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুসারী। তাকে যারা মারধর করেছে তারা সংসদ সদস্য শাজাহান খানের অনুসারী। মারধরের শিকার খন্দকার আব্দুস সালামের গুরুতর কোনো আঘাত নেই। তবে তাকে চড়থাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। তার হার্টে ওপেন সার্জারি করা। তাই এখান থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’