আ.লীগ সরকারে থাকলে ইসি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না : মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনের সময় সরকারে থাকে তাহলে কোনো নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহের নতুন বাজারে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ একটি প্রতারক, মিথ্যাবাদী দল, অত্যাচারী দল। নির্বাচন কমিশন যাই বলুক, আমরা তাদের বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনের সময় সরকারে থাকে, তাহলে কোনো নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছেড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ওরা বলে ছিল নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের পর পরই একটি নির্বাচন দিবে, দেয়নি।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যত বার ক্ষমতায় এসেছে ততবার জনগণের সঙ্গে বেইমানি করেছে। আওয়ামী লীগ বলেছিল ক্ষমতায় এলে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে, বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দিবে। বলেছিল বিনা পয়সা সার দিবে। কিন্তু দেয়নি। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, মিথ্যা বলে ভোট নিয়ে ক্ষমতায় বসে জনগণকে লাথি মারছে। আওয়ামী লীগ বলেছিল এই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কথা বলার অধিকার দেওয়া হবে। আমরা যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই স্বপ্ন আজ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। দলটি ক্ষমতায় এসে আজ মানুষের কথা বলার অধিকার, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে বন্দি করে ফেলেছে।
মহাসচিব আরও বলেন, সভা-সমাবেশ করার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। দেশের জনগণ সংবিধান তৈরি করে আমাকে সভা করার অধিকার দিয়েছে। আওয়ামী লীগ কী করেছে? এই সংবিধানকে লঙ্ঘন করে জনগণকে কৃতদাসে পরিণত করতে চাইছে। আজকে মানুষের মুখে হাসি নেই।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করেন। গণমাধ্যম আছে অনেক, কিন্তু তাদের লেখার ক্ষমতা নেই। ডিজিটাল আইন দিয়ে সরকার মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের জন্য এই দেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। তারা যুদ্ধ করেছিল কথা বলতে পারবে, মানুষে মানুষে বিভেদ থাকবে না, সুন্দর একটা সমাজ হবে এ জন্য। কিন্তু হয়নি। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী এমপিরা দুর্নীতি করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। আর দুর্নীতি দমন কমিশন পুটি মাছ ধরে বোয়াল মাছ ধরে না। যে মাছ সব মাছ খেয়ে ফেলে তাকে ধরে না।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির লোক আওয়ামী লীগনেতা হানিফের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, ডা. জাফরুল্লাহর সাথে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন কমিশন নিয়ে এটা তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষে কথা বলার তিনি কেউ নন।’
‘আওয়ামী লীগ একটি প্রতারক দল, অত্যাচারী দল। এখন কেউ খারাপ আচরণ করলেই মানুষ বলে, এটা মানুষ নয়, আওয়ামী লীগ’—এমন মন্তব্যও করেন মির্জা ফখরুল।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, শরিফুল ইসলাম, সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান জাফরি তুহিন, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু প্রমুখ।