আশা করি লিয়াকত সত্য কথা স্বীকার করেছেন : তদন্ত কর্মকর্তা
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতের খাস কামরায় তিনি এই জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে লিয়াকতকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খাইরুল ইসলাম আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এজাহার নামীয় এক নম্বর আসামি লিয়াকত আমাদের কাছে ঘটনার বিষয়ে স্বীকার করেছেন। যদি ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের কাছে তিনি স্বীকার না করেন, তাহলে পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দির কোনো মূল্য নেই।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিলে মূল্য তখনই হবে, যদি স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আলামত উদ্ধার হয়।’
র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা লিয়াকতকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করেছিলাম। আমরা তাঁর স্বীকারোক্তি দেওয়া কপি পেয়েছি। এখন কী বলেছে না বলেছে, আমরা এখনো জানি না। তবে আমার বিশ্বাস উনি সত্য প্রকাশ করেছেন এবং সত্য প্রকাশ করবেন।’
খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা একটা হত্যা মামলা। আমরা আশা করছি, যত তাড়াতাড়ি এটা শেষ করা যায়। তার পরও অনেক তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে সময় লাগছে।’
এর আগে আজ সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য দুপুর ১২টার দিকে আদালতে নেওয়া হয়। সিনহা হত্যা মামলায় তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় লিয়াকত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া এ মামলায় এপিবিএনের তিন সদস্য আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আব্দুল্লাহ।
একই মামলায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত রিমান্ডে আছেন। গত শুক্রবার তৃতীয় দফায় তাঁদের তিন দিনের রিমান্ডে নেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি ও রামু থানায় একটি মামলা করে।
গত ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরের দিন বিকেলে প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী ও নন্দদুলাল রক্ষিতসহ সাত পুলিশ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এ মামলার অপর দুই আসামি এসআই টুটুল ও মো. মোস্তফা আদালতে হাজির হননি। পুলিশের দাবি, এ নামে জেলা পুলিশে কেউ নেই। তবে আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
ওই হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও টেকনাফ পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এদিকে, পুলিশের করা মামলায় দুই আসামি সিনহা রাশেদের দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ জামিনে মুক্ত হয়েছেন।