আশুলিয়ায় ভাইয়ের বন্ধুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ স্কুলছাত্রীর
প্রথমে চুক্তিতে তিন বেলা ভাত খাওয়ার নামে চুক্তি, পরে কৌশলে পোশাক পরিবর্তনের আপত্তিকর ভিডিও ও পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল ও ধর্ষণ। এরপর দফায় দফায় টাকা দাবি, তারপর হাতেনাতে ধরা পরে অভিভাবকের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে রফাদফার চেষ্টা।
সাভারের আশুলিয়ায় এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে এমন সব অপরাধে জড়িয়েছেন স্কুলছাত্রীর বড় ভাইয়ের বন্ধু। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ সব অভিযোগ নিয়ে থানায় মামলা করেছেন ওই স্কুলছাত্রী।
অন্যদিকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন অপর এক নারী। দুই মামলায় আসামিদের আটক করতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে (১৮) একাধিক বার ধর্ষণের অভিযোগ মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবক আশুলিয়ার নিরিবিলি স্বপ্নবিলাস এলাকার বাসিন্দা। সে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বড় ভাইয়ের বন্ধু।
জানা যায়, ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রী বড় ভাইয়ের বন্ধুর মা বিদেশে থাকেন। বাবা অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করেন। খাবারের সংকট মেটাতে রনি তাঁর মায়ের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর মায়ের কাছে মাসিক তিন হাজার টাকা চুক্তিতে খাবার খেতেন। ওই স্কুলছাত্রীর মা পোশাককারখানার শ্রমিক।
সেই সুবাদে অভিযুক্ত যুবক ২০২১ সালের দিকে কৌশলে স্কুলছাত্রীর পোশাক পরিবর্তনের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করেন। এরপর থেকে সেই ভিডিও দেখিয়ে শুরু করেন মানসিক নির্যাতন। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন।
অভিযোগে জানা গেছে, ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার ওই শিক্ষার্থীকে ব্লাকমেইল করে ২০২১ সালের শুরুর দিকে প্রথম ধর্ষণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফায় তাঁকে ধর্ষণ করেন।
পরে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেন অভিযুক্ত যুবক। ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ওই শিক্ষার্থীর বান্ধবীদের ভিডিও পাঠিয়ে আরও মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলেন। এরপর ওই শিক্ষার্থীকে ভিডিও পাঠিয়ে টাকা চেয়ে বিকাশ নম্বর পাঠাতেন অভিযুক্ত যুবক।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি আবারও ১০ হাজার টাকা চেয়ে নিরিবিলি এলাকার বিকাশ এজেন্ট মুদি দোকানদার শামসুর রহমানের নম্বর দেন অভিযুক্ত যুবক।
পারিবারিক কাজে টাকা প্রয়োজন হলে গার্মেন্টস কর্মী মা ভুক্তভোগীর কাছে টাকা চাইলে সে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাঁর মা রাগান্বিত হলে ভুক্তভোগী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে ভুক্তভোগী তাঁর মাকে ঘটনা খুলে বলেন।
পরে কৌশলে ওই বিকাশের দোকান থেকে যুবককে হাতেনাতে ধরেন মেয়েপক্ষ। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে অভিযুক্তের বাবা স্থানীয় মাতব্বরদের শরণাপন্ন হন এবং বিষয়টি টাকার বিনিময়ে রফাদফার চেষ্টা করেন।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগীর মা থানার শরণাপন্ন হলে স্থানীয় মাতব্বর আশুলিয়ার এনায়েতপুর এলাকার আব্দুল বারেকের ছেলে সাদ্দাম মিয়া, ফাল্গুনী এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে কালাম ওরফে তোতলা কালাম ফাল্গুনী একটেল টাওয়ার এলাকার জসিম ভুক্তভোগী ওই স্কুলছাত্রীর খালুকে বিষয়টি মীমাংসার জন্য চাপ দেন। পরে এক লাখ ১০ হাজার টাকার একটি সমঝোতাস্মারকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেন তাঁরা।
এরপর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়া থানায় ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রী মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর রশিদ জানান, ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীকে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে নিরিবিলি এলাকায় ৩৫ বছর বয়সী এক নারীকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পরে বিয়েতে রাজী না হওয়ায় ওই নারী আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।
ধর্ষণের শিকার নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেছে পুলিশ।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান জানান, দুটি ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।