আসামিরা জড়িত থাকলে চিকিৎসক-অ্যাম্বুলেন্স ডাকতেন না : আইনজীবী
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) হত্যা মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের উপস্থাপন চলছে। আজ মামলার চার আসামির যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে চার আসামির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়।
শুনানিতে আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমিনুল গনি টিটু বলেন, ‘আসামিরা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকলে তারা হল ছেড়ে পালিয়ে যেতেন। ডক্টর (চিকিৎসক) আনতে বলতেন না, প্রভোস্টকে ফোন করে জানাতেন না। অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দিতেন না।’
মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে উল্লেখ করে আইনজীবী আরও বলেন, ‘মামলায় বুয়েটের ভিসিকে সাক্ষী করা হয়নি। প্রভোস্ট সাক্ষী থাকলেও তাঁকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে আনা হয়নি। ভিসি ও প্রভোস্ট ছাত্রদের অভিভাবক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন। যে ১০ থেকে ১২ জন ছাত্র মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের আবরার নিহত হওয়ার পর বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে হাইকোর্টে রিট করে তারা ছাত্রত্ব ফিরে পেয়েছেন।’
আমিনুল গনি টিটু বলেন, ‘কোন অপরাধে তাদের ছাত্রত্ব বাতিল হয়েছিল? এটা এ মামলায় আড়াল করা হয়েছে।’
আজ যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়া চার আসামি হলেন— ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মুনতাসির আল জেমি ও মোর্শেদ অমত্য ইসলাম।
আইনজীবী আমিনুল গনি টিটু প্রথম তিনজনের এবং আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু অপর আসামির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদীপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয় গত ২৫ অক্টোবর।
২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা।
মামলার ২৫ আসামি
মামলায় আসামিরা হলেন—বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, উপসমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
আসামিদের মধ্যে মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক। বাকি ২২ জন গ্রেপ্তার আছেন। এ মামলায় আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার বিবরণ
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি এ মামলার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কার্যালয়ে আবেদন করেন নিহত আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ। গত বছরের ১২ মার্চ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আবরার হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ফাইল অনুমোদন করেন।