আয়োজকদের বাধ্য করা হতো হেফাজতের নেতাদের ওয়াজে নিতে : পুলিশ
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেছেন, কর্মীদের নিয়ে সারা দেশে ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন’ নামক একটি সংগঠন তৈরি করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আয়োজকদের বাধ্য করা হচ্ছে হেফাজত নেতাদের বিভিন্ন ওয়াজে নেওয়ার জন্য। এর মাধ্যমে তাঁরা উগ্রবাদী বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে পারছে।
আজ শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মাহবুব আলম এ দাবি করেন।
ডিবি সাম্প্রতিক সময়ের হেফাজতের বিরুদ্ধে ১২টি ও ২০১৩ সালের ৫৩টি মামলার তদন্ত করছে জানিয়ে মাহবুব আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মোট ১৪ জন হেফাজতের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোরআন-হাদিস বোঝেন, জানেন এমন তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনটি দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা তদন্ত করছেন। এ ছাড়া অন্যরাও তদন্ত করছেন। তদন্তে মূলত নাশকতার মূল উদ্দেশ্য কী, কারা করছে, কেন করছে, তা জানার চেষ্টা করছেন তারা।’
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ অরাজনৈতিক দল হলেও অনেকে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জানিয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘হেফাজতকে কাজে লাগিয়ে একটি পক্ষ সরকার পতনের অপচেষ্টা চালিয়েছিল। এ বছর আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে যে নাশকতা হলো, সেখানে একই ধরনের আরেকটি চক্রান্ত হয়েছে। এটা তদন্তে অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, হেফাজত নিজেদের অরাজনৈতিক দল বলছে। কিন্তু বাস্তব হলো তাদের অনেকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’
মাহবুব আলম বলেন, ‘অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতাই মনে করেন যে হেফাজত একমাত্র প্ল্যাটফর্ম যেটা ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে কাজে লাগতে পারে। মাদ্রাসার ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তাঁরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এমন অপচেষ্টা করছে বা নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এগুলো তাদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে পেয়েছি। ২০১৩ সালে বাবুনগরী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে মুফতি ফখরুল জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে পুলিশ এসব ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরেছে।’
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পেয়েছে দাবি করে মাহবুব আলম আরও বলেন, ‘প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই আলাদা আলাদা এজেন্ডা রয়েছে। সেই এজেন্ডাগুলো তারা বাস্তবায়ন করতে চায় হেফাজতকে দিয়ে। হেফাজত এমনই এক সংগঠন যার ডাকে মাদ্রাসার ছাত্রদের আনা ও ব্যাপক লোক সমাগম সম্ভব হয়।’
অন্যরা হেফাজতকে ব্যবহার করতে চায়। হেফাজত কী চায়, এমন প্রশ্নে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার পতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান মডেল বানানোর পরিকল্পনা আছে হেফাজত নেতাদের।’
হেফাজতের মধ্যে বেশ কয়েকটি ভাগ রয়েছে দাবি করে মাহবুব আলম বলেন, ‘এসব পক্ষের ব্যাপারে খোঁজ রাখা হচ্ছে। কারা উগ্রবাদের পক্ষে, তাদের নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। সে বিবেচনায় গ্রেপ্তার অব্যাহত আছে। উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িতরা সম্প্রতি যে নাশকতা করেছে সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ, অডিও কথোপকথন এবং জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্যগুলো এসেছে সেগুলোর মাধ্যমে সাক্ষ্য-প্রমাণের চেষ্টা চলছে।’
হেফাজত নেতা মামুনুল হকের গোপন বিয়ের বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে বলে জানান মাহবুব আলম। তিনি বলেন, প্রথম বিয়ে শরিয়ত বা আইনসম্মতভাবে হয়েছে। পরবর্তী যে দুটি বিয়ের কথা তিনি স্বীকার করেছেন, এ দুটি চুক্তিভিত্তিক বিয়ে। সেখানে কোনো কাবিননামা নেই। পরের বিয়ের চুক্তিগুলো হচ্ছে- স্ত্রী থাকবে কিন্তু স্ত্রীর কোনো মর্যাদা পাবে না। স্ত্রী মেলামেশা করতে পারবে কিন্তু সম্পর্কের কোনো অধিকার পাবে না। একই সঙ্গে কোনো দাবিদাওয়া বা সন্তান ধারণ করতেও পারবে না। এ ধরনের চুক্তি প্রচলিত আইনের পরিপন্থী বলে জানান মাহবুবুল আলম।
হেফাজতের সঙ্গে কোন কোন রাজনৈতিক দল জড়িত, তা জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইসলামপন্থির বাইরেও মূলধারার রাজনৈতিক দল আছে। তাঁদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলেরও বেশ কিছু নেতার যোগসাজশ রয়েছে। ২০১৩ সালেও ছিল, চলতি বছরেও আছে।’