ইউক্রেনে আটকাপড়া নাবিকদের উদ্ধারে চেষ্টা চলছে : নৌ-প্রতিমন্ত্রী
যুদ্ধকবলিত ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকাপড়া বাংলাদেশি জাহাজ ‘এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে ২৯ জন নাবিক ছিলেন। রকেট হামলায় একজন নাবিক মারা গেছেন। বাকি ২৮ জন অক্ষত ও ভালো আছেন। তাদের নিরাপদে বের করে আনার চেষ্টা করছে সরকার। এ তথ্য জানিয়েছেন নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কূটনৈতিকপর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছি। হয়তো দ্রুত তাদের সেখান থেকে নিয়ে আসতে পারব।
ইউক্রেনে আটকাপড়া জাহাজটিতে গতকাল বুধবার রকেট হামলায় বাংলাদেশি নাবিক হাদিসুর রহমান মারা যান। এ ঘটনায় অন্য নাবিকরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের দ্রুত উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন।
জাহাজের বর্তমান অবস্থা ও নাবিকদের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আমরা পোল্যান্ডের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সবাই চেষ্টা করছি। নাবিকরা জাহাজ থেকে নেমে গেলে, তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা জাহাজটি নিয়ে নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি। কারণ আমাদের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ওখানে আটকা অবস্থায় আছে। এটা বাণিজ্যিক জাহাজ, যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকার কথা। বন্দরের মধ্যে ব্যাপকভাবে মাইন সেট করার কারণে চ্যানেলটা বন্ধ হয়ে গেছে। পোর্ট কর্তৃপক্ষ সেখানে যে পাইলটিং করে সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে জাহাজটি আটকে গেছে।
জাহাজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাহাজে এক মাসের বেশি সময়ের খাবার মজুত ছিল। গতকাল রাতে মিসাইল হামলায় জাহাজের ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পাই। এরপরই খবর আসে আমাদের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান জাহাজে মিসাইলের আঘাতে মারা গেছেন। বাকি ক্রুরা ফায়ার ফাইটিংয়ের মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। জাহাজ এখন চলাচল করা সম্ভব নয়। সেখানে একটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে,এটা স্বাভাবিক। সেখানে যুদ্ধ চলছে। তারা যুদ্ধের মধ্যে আটকা পড়েছেন। তারা মুভমেন্ট করতে পারছে না। এর মধ্যে সেখানে মিসাইল হামলা হয়েছে। আমরা সবকিছু বিবেচনায় জাহাজের ক্রুদের জীবনের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। জাহাজের মধ্যে থেকে তারা বেশি নিরাপদ থাকতে পারে।
হাদিসুরের মরদেহ কবে নাগাদ বাংলাদেশে আসতে পারে, জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ বলেন, এটা তো বলা মুশকিল। আমরা হাদিসুরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা তার মৃতদেহ সংরক্ষণ করেছি।এখন টোটাল যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আমরা হাদিসুরকে কবে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারব বা যাঁরা বেঁচে আছেন তাদের কী করতে পারব, সেটা যুদ্ধক্ষেত্রের ওপর ডিপেন্ড করে। আসলে তারা তো যুদ্ধের মধ্যে আটকে গেছে। এটার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। যতটুকু আমরা দেখছি, দুই পক্ষের কথাবার্তার মধ্যে ভালো কিছু দেখছি না। যদি ভালো হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিতভাবে আমরা হাদিসুরকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে পারব এবং বাকিদেরও নিরাপদে নিয়ে আসতে পারব।
সরকার জাহাজে রাশিয়ার এ হামলার নিন্দা জানাবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, হামলাটা যুদ্ধের মধ্যে হওয়ায় মিসাইল কারা মেরেছে, আমরা এখনো কনফার্ম হতে পারিনি। আমরা যখন জানব- এটা কারা করেছে, তখন আমরা সে বিষয়ে কথা বলব।