ইউক্রেন থেকে বেঁচে ফিরে যা বললেন নাবিক আমিন খান
‘এখানেই নোঙর’ বাড়িটি এখন আলো ঝলমলে। আনন্দিত সাতক্ষীরা শহরের নারকেলতলার মানুষ। রাশিয়ার হামলায় আক্রান্ত ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ থেকে ঘরে ফিরেছেন নাবিক মনসুরুল আমিন খান গিনি। তবে, ইউক্রেনে আটকেপড়া বিভিষিকাময় দিনগুলো এখনও চোখের সামনে ভাসছে আমিন খানের। সহকর্মীকে হারিয়ে বেদনার্ত তিনি।
আমিন খান বলেন, ‘২ মার্চ স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠি আমরা। তখন আমরা জাহাজের ভেতরে। ওপরে গিয়ে দেখি ধোঁয়া উড়ছে, আগুন জ্বলছে। আমরা দ্রুত আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করলেও ততক্ষণে হারিয়েছি আমাদের সহকর্মী এক নাবিককে। তাঁকে রেখেই আমাদের দেশে ফিরতে হলো’।
আমিন খান জানান, ইউক্রেনে অলভিয়া বন্দরে নোঙর করা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র নাবিকেরা জাহাজ থেকে দ্রুত নেমে আসেন। এরপর এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের। স্থানীয়ভাবে একটি বোট এসে নাবিকদের উদ্ধার করে। নিরাপদ স্থানে রাখার পর আরও নিরাপত্তার জন্য রাখা হয় বাংকারে।
ইউক্রেন থেকে বেঁচে ফেরা এ নাবিক বলেন, ‘আমরা আগুন দেখেছি, জাহাজ বিধ্বস্ত হতে দেখেছি, আমরা মৃত্যু দেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘সে দৃশ্য ভয়াবহ। চারদিকে বিকট শব্দ। আকাশজুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। সরাসরি কোনো হতাহতের ঘটনা না দেখলেও আমাদের আতঙ্কের শেষ ছিল না। বাড়িতে মাঝে মধ্যে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু, আতঙ্ক আর হতাশা কিছুতেই পিছু ছাড়েনি। তবু ভরসা ছিল একদিন বাড়ি ফিরবই।’
মনসুরুল আমিন খান আরও বলেন, ‘শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার, শিপিং করপোরেশন এবং সর্বোপরি রোমানিয়া দূতাবাসের আন্তরিক চেষ্টায় আমরা সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারায় সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
মনসুরুল আমিন খানের বাবা বিএডিসির সাবেক কর্মকর্তা নুরুল আমিন খান ও মা মর্জিনা খানম ছেলেকে কাছে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। মনসুরুল আমিন খানের স্ত্রী আশরুকা সুলতানা ও তিন সন্তান পুত্র ফাহিমি, ফারহান ও ফারদিনের চোখেমুখে এদিন লেগেছিল হাসি।