ইভিএম নিয়ে আ.লীগ নেতার বিতর্কিত বক্তব্য : সাংঠনিক ব্যবস্থা নেবে দল
নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জোবায়দুল হক রাসেলের বিতর্কিত বক্তব্যে বিব্রত জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য বিভ্রাটের অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলার দাবি করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। আর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে জেলা আওয়ামী লীগ।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর তাঁতেরকাঠী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে উঠান বৈঠকে ‘ভোট হবে ইভিএমে, কে কোথায় ভোট দেবে, তা কিন্তু আমাদের কাছে চলে আসবে। অতএব ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নাই, টেনশনেরও কিছু নাই।’ জোবায়দুল হক রাসেলের এমন বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশজুড়ে।
তাঁর এমন বক্তব্য নিয়ে সব মহলে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। বিব্রত বোধ করছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও। আর সাধারণ ভোটারদের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ নিয়ে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খান আবি শাহানুর খান।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খান আবি শাহানুর খান বলেন, ‘ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ নিয়ে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার রাত থেকে বহিরাগত কেউ এলাকায় থাকতে পারবে না। নির্বাচন হবে নির্বাচনের মতো।
তবে ইভিএম নিয়ে জোবায়দুলের বক্তব্য মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘যে বক্তব্য দিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়, সেই বক্তব্য যদি আওয়ামী লীগ নেতারা দেয়, তাতে সরকার তথা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে আবদুস ছালাম নামে সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘এর আগে তিনি (জোবায়দুল) বলেছেন- “যাঁরা নৌকায় ভোট দেবেন, তাঁরাই কেবল ভোটকেন্দ্রে যাবেন।” এখন আবার ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক ও নেতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য বিভ্রাটের অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য অবশ্যই বিব্রতকর।’ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি যেহেতু পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, আপনি জেলা আওয়ামী লীগের সাথে যোগাযোগ করুন।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কথাটা সে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের ভয় দেখানোর জন্য বলেছেন। তবে কথাটি তার বলা ঠিক হয়নি। দলসহ আমরা সবাই তার এ বক্তব্যে বিব্রত। আমরা এ বিষয়ে তাকে সতর্ক করব।’
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান ওরফে ভিপি মান্নান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ও একটা অজোপাড়াগাঁয়ের নেতা। ও কি বললো তাতে কী আসে যায়। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ৩৬ জন, তাঁর মধ্যে সে একজন। তাঁর তো কোথাও বক্তব্য দেওয়ারই এখতিয়ার নেই। এ ধরনের বক্তব্য সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পরিপন্থি। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যেন আর কেউ এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে।’
গত ৭ ফেব্রুয়ারি নাজিরপুর ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আমির হোসেন ব্যাপারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি শপথ নেওয়ার আগেই ১৯ ফেব্রুয়ারি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। একই ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান ৩ মার্চ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। এ কারণে ওই শূন্য দুটি পদে উপনির্বাচন হচ্ছে। ২৭ জুলাই উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। মোট ছয়জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপদে দুজন প্রার্থী লড়ছেন।