ইভ্যালির এমডির বিরুদ্ধে যশোরে চেক জালিয়াতির মামলা
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলের নামে চেক জালিয়াতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (চৌগাছা) এ মামলাটি হয়। মামলার বাদী জেলার চৌগাছা উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের তরফদার মো. মোশাহেদুর রহমান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ টাকা নিয়েও পণ্য দেননি। পরে ২৫ জুলাই তরফদার মো. মোশাহেদুর রহমানকে ন্যাশনাল ব্যাংকের এক লাখ ৭৭ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চেকটি ডিজঅনার হয়।
মামলার বাদী জানান, অপরাধ আমলে নিয়ে মামলটি গ্রহণ করে আসামির প্রতি সমন জারি করেছেন আদালত। আগামী ৩ নভেম্বর আসামিকে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
এদিকে, রাজধানীর ধানমন্ডি থানার মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। অপরদিকে রাসেলের স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের রিমান্ড নাকচ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার অ্যাডিশনাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) কামরুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত রোববার এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে রাসেল-শামীমাসহ সাত-আটজনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মো. রাসেল ও তাঁর স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এরপরের দিন শুক্রবার তাঁদের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। সেই রিমান্ড শেষ হলে তাঁদের আজ আদালতে আনা হয়। তবে আজ তাদের গুলশান থানায় করা মামলায় নতুন করে রিমান্ডের আবেদন না করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) ওহিদুল ইসলাম।
এর আগের দিন বুধবার দিবাগত রাতে একজন গ্রাহক রাসেল ও শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে প্রায় সোয়া তিন লাখ টাকা প্রতারণা, আত্মসাৎ ও হত্যার হুমকির অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেন। এর পরই অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তাঁর স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তারের পর এক ব্রিফিংয়ে র্যাবের লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, দেশি বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়সহ প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি অথবা দায় মেটাতে না পারলে প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সিইও রাসেল।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘রাসেল জানিয়েছেন, তিনি পরিকল্পিতভাবে এই ব্যবসাটি করে আসছিলেন। এটি পরিবার নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রে স্বচ্ছতা ছিল না। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানে কোনো জবাবদিহিতাও ছিল না। ফলে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠানটির দায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং বর্তমানে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ইভ্যালির নেতিবাচক ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি উন্মোচিত হওয়ায় অনেক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি থেকে সরে এসেছে। ব্যবসায়িক উত্তরণ নিয়ে তিনি নিজেও সন্দিহান ছিলেন। এর উত্তরণের ব্যাপারে তিনি আমাদের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বলতে পারেননি।’
র্যাব জানায়, ইভ্যালির ব্যবসায়িক অবকাঠামো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভাড়া করা স্পেসে ধানমন্ডিতে প্রধান কার্যালয় এবং কাস্টমার কেয়ার স্থাপিত হয়। একইভাবে ভাড়া করা স্পেসে আমিন বাজার ও সাভারে দুটি ওয়্যারহাউজ চালু করা হয়। কোম্পানিতে একপর্যায়ে প্রায় দুই হাজার ব্যবস্থাপনা স্টাফ এবং এক হাজার ৭০০ অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ ছিল, যা ব্যবসায়িক অবনতিতে বর্তমানে যথাক্রমে স্টাফ এক হাজার ৩০০ জনে এবং অস্থায়ী পদে প্রায় ৫০০ জন কর্মচারীতে এসে দাঁড়িয়েছে। কর্মচারীদের একপর্যায়ে মোট মাসিক বেতন বাবদ দেওয়া হতো প্রায় পাঁচ কোটি টাকা; যা বর্তমানে এক দশমিক পাঁচ কোটিতে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রেপ্তার দুজন। গত জুন থেকে অনেকের বেতন বকেয়া রয়েছে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী পদাধিকারবলে নিজেরা মাসিক পাঁচ লাখ টাকা করে বেতন নিয়ে থাকেন।