ইভ্যালির রাসেলের মুক্তি চেয়ে ‘গ্রাহকদের’ বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলের মুক্তির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছেন কিছু মানুষ। তারা গণমাধ্যমের কাছে নিজেদের ইভ্যালির গ্রাহক হিসেবে দাবি করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজনকে আটক করে পুলিশ।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাসেল এবং তাঁর স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীনের রিমান্ড শুনানি শেষে এই বিক্ষোভ হয়।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আজ বিকেলে মো. রাসেল ও শামীমা নাসরিনকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম এই আদেশ দেন।
শুনানি শেষে রাসেল এবং শামীমা নাসরীনকে আদালত চত্বর থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় প্রায় অর্ধশত যুবক একত্রিত হয়ে গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, রাসেল ভাইয়ের মুক্তি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
তখন পুলিশ তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাক্কাধাক্কি ও বাকবিতণ্ডা তৈরি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সেখান থেকে একজনকে আটক করে।
তখন আটক ব্যক্তি পুলিশকে বলতে শুরু করেন, ‘আমি গরিব মানুষ স্যার, আমার অনেক টাকার পণ্য ইভ্যালিতে আটকা। বিশ্বাস না করলে আমার মোবাইলে দেখেন। আমার বউ-বাচ্চা না খেয়ে আছে, আমাকে ছেড়ে দেন, আমাকে মাফ করে দেন স্যার।’
এ সময় কয়েকজন বিক্ষোভকারী গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, মো. রাসেল যদি ছাড়া পান তাহলে তাদের টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এ চিন্তা থেকেই মূলত তারা বিক্ষোভ করছেন এবং রাসেল-শামীমার মুক্তি দাবি করছেন। আর রাসেল যদি কারাগারে থাকেন, তাহলে তাদের টাকা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও থাকবে না।
বিক্ষোভকারীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন, হলমার্ক, ডেসটিনিসহ সম্প্রতি ই-অরেঞ্জের ঘটনায় কেউই টাকা পাননি। তারা চান না, ইভ্যালির ক্ষেত্রেও এ ধরনের কোনো কিছু ঘটুক। অনেকেই অনেক পণ্য পেয়েছেন ইভ্যালি থেকে। তাই, এখানে এসে রাসেলের মুক্তি চেয়ে দাঁড়িয়েছেন।
একেবারে কোনো জিনিস না পেলে তারা রাসেল-শামীমার সাজা চাইতেন বলেও যুক্তি দেখান গ্রাহক দাবি করা বিক্ষোভকারীরা। তারা আরও বলেন, রাসেল ভাই পাঁচ মাস সময় চেয়েছেন, তারা দিয়েছেন। তারপরও কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হল? এটাকে একটা ষড়যন্ত্র মনে করেন বিক্ষোভকারীরা। তারা বলতে থাকেন, এটা ইভ্যালির বিরুদ্ধে, ই-কমার্সের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মো. রাসেল এবং তাঁর স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে অনেক মানুষ গিয়ে রাসেলের বাসার সামনে দাঁড়ান। সেখানেও গ্রাহক পরিচয়ে অনেকে মো. রাসেল ও শামীমা নাসরীনের মুক্তি দাবি করেন এবং তাদের গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করেন।
এ সময় একজন গ্রাহক বলেন, ‘আমরা লাখ লাখ গ্রাহক রয়েছি। আমরা মামলা করেনি। মামলা করে কী আমাদের টাকা পাব? তারা কিছুদিন সময় চেয়েছিল। সময় দিলে তারা টাকা ফেরত দিত।’
এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান থানায় একজন গ্রাহক রাসেল ও শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে প্রায় সোয়া তিন লাখ টাকা প্রতারণা, আত্মসাৎ ও হত্যার হুমকির অভিযোগে মামলা করেন। এর পরই এই অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার দেশের ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি জানায়, ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।