ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতিকে যেসব প্রস্তাব দিল জাপা
সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন করার প্রস্তাবকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি । সেটি সম্ভব না হলে সার্চ কমিটির মাধ্যমে চার থেকে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপ শেষে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বঙ্গভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। সংলাপ শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বের হয়ে আসে জাপা প্রতিনিধি দল।
এ সময় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘আন্তরিক পরিবেশে সংলাপ হয়েছে। সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের যে বিধান রয়েছে, সেটি অনুসরণ করার কথাই আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি।’
জাতীয় পার্টির কর্তৃক তিনটি প্রস্তাব হলো- এক. নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলটি মনে করে, এখনও যে সময় রয়েছে, এর মধ্যেই ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব। প্রয়োজনে আইন তৈরিতে আমরা প্রস্তুত আছি। সরকার চাইলে আমরা আইনের খসড়া তৈরি করে দিতে পারি।
দুই. সরকার যদি মনে করে, এ সময়ের মধ্যে আইন করা সম্ভব নয়, তাহলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে সেটি করতে পারেন। পরে সেটি আইনে পরিণত করা যাবে।
তিন. আর যদি অধ্যাদেশ জারি করাও সম্ভব না হয়, তাহলে আগের মতো সার্চ কমিটি গঠন করে কমিশন গঠন করা যেতে পারে। সার্চ কমিটির জন্য আমরা চারটি থেকে পাঁচটি নাম প্রস্তাব করেছি। এর বাইরেও কমিশনের সদস্যের জন্য একটি নাম প্রস্তাব করেছি। এ মুহূর্তে নামগুলো জানাচ্ছি না।
এর আগে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে সংলাপ শুরু হয়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন।
আট সদস্যের প্রতিনিধি হলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমীন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়ন না হওয়ায় গত দুইবার রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি গঠন করে আসছেন।
জানা গেছে, সংলাপে আমন্ত্রিত প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সার্চ কমিটি ও পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবেন রাষ্ট্রপতি। ইসির নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হবে। গত দুইবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। গত দুইবারের সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব।
আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন কমিশন গঠনে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবেন।
এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য দুজন, চারজন নির্বাচন কমিশনারের জন্য আটজনের নাম সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ জনের নামের তালিকা থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার চূড়ান্ত করবেন।