ইয়াসের প্রভাবে বাড়ছে পদ্মা-যমুনার পানি, পাবনায় আগাম বন্যার আশঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। ফলে বৃহত্তর পাবনায় আগাম বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছরের আম্পানের অভিজ্ঞতায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এ বছর আগেভাগেই সব প্রস্তুতি নিচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ।
পদ্মা ও যমুনাবেষ্টিত পাবনার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগাম বন্যার আশঙ্কায় অনেকেই ক্ষেতের আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছে, বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। অনেকে আবার তাদের ভাঙা নৌকাটিকে মেরামত করে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এখনই বন্যার আশঙ্কা নেই।
পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে পদ্মা ও যমুনার পানি বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে যমুনায়। তবে পদ্মায় একটু কম। এ সময় যমুনায় পানি বৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।’
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘যমুনার পানি নগরবাড়ী পয়েন্টে ১০ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু বিপৎসীমার অনেক নিচে। এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদীতে পানি অনেক কম।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অভয় দিলেও নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে বসে থাকতে পারছে না বৃহত্তর পাবনার পদ্মা যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষ।
গত বছর আম্পান পরবর্তী আকস্মিক আগাম বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে এ বছর আগেই বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
বেড়া উপজেলার নাগদহ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ কৃষক তাদের ক্ষেতের আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তুলছে। দ্রুত ধান কাটার জন্য দুর্গম এ গ্রামে কম্বাইন্ড হারভেস্ট মেশিনের ব্যবহার করছে কৃষকরা।
কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকের জন্য বসে না থেকে গ্রামের সব কৃষক মিলে এখানে মেশিন দিয়েই ধান কাটছি। গত বছর আম্পানের পর আমরা ঘরে ধান তুলতে পারিনি। আকস্মিক বন্যায় সব ধান ভেসে গেছে। তাই এবার ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে এই ব্যবস্থা করেছি। এ বছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর আবারও আগাম বন্যা হলে বিশাল এ মাঠের বেশির ভাগ ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হবে না। ফলে কৃষকরা সবাই মিলেই মেশিন দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছি।’
এদিকে, পদ্মা ও যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়া উপজেলার পায়না, হাটুরিয়া, নাকালিয়া, মধুপুর, গণপতদিয়া গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কাগেশ্বরী শাখা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে বলে জানায় গ্রামবাসী।
পানি বৃদ্ধি এভাবে অব্যাহত থাকলে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী আবারও আগাম বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
চরনাগদহ গ্রামের জেলে পরিবারের গৃহবধূ রহিমা খাতুন জানান, তাঁর দুই ছেলে মাছ ধরার জন্য কয়েক বছর আগে একটি বড় নৌকা কিনে, তবে গত দুই বছর তেমন কাজ না থাকায় নৌকাটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। নৌকাটি সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ায় দ্রুত এটি মেরাতমের জন্য মিস্ত্রিকে কাজে লাগানো হয়েছে। নতুন নৌকা কেনার সামর্থ্য না থাকায় দুর্যোগের আশঙ্কায় ভাঙা নৌকাটিই মেরামত করা হচ্ছে।
এদিকে, গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই মনে করছে সাইক্লোন পরবর্তী অবিরাম বর্ষণ হলে এবং নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দ্রুত পানি ঢুকে নিচু এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন আশঙ্কায় অনেকেই আগে থেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।
পাবনার সাথিয়া উপজেলার নাগডেমরা গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, ‘পানি যখন বৃদ্ধি পায় তখন সবকিছু দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার সময় পাওয়া যায় না। ফলে এবার আগে থেকেই অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘এ বছর আগাম বন্যা হওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে পারে।’
তবে তা স্থায়ী নাও হতে পারে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, সব বিষয় মাথায় রেখেই প্রশাসন কাজ করছে।