ঈদযাত্রা সহজ করতে গাজীপুরে দুই ফ্লাইওভার চালু
এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর নির্মিত দুটি ফ্লাইওভার যানবাহন চলাচলের জন্য একযোগে খুলে দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই সোমবার দুপুরে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় গাজীপুর মহানগরীর নাওজোড় ও কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার ফ্লাইওভার। এতে অন্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত অনেকটা স্বস্তিদায়ক হবে বলে দাবি করেছে গাজীপুর সড়ক বিভাগ।
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মোহাম্মদ শরীফুল আলম বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের কথা চিন্তা করে আজ সোমবার দুপুর ২টার দিকে একযোগে খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের নাওজোড় ও সফিপুর বাজার ফ্লাইওভার। এতে এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঈদের আগে ফ্লাইওভার দুটি খুলে দেওয়ায় ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এডিবির অর্থায়নে সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ফ্লাইওভারগুলো নির্মিত হচ্ছে। প্রায় ১০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার এলাকায় ওই মহসড়কের উপর ১২৬৯ মিটার দীর্ঘ সফিপুর ফ্লাইওভার নির্মিত হচ্ছে। এ ছাড়া ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮১৫ মিটারের নাওজোড় ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। পুরো কাজ না শেষ হলেও ঈদে যানজট ও ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতেই ফ্লাইওভার দুটি খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে শিল্পাঞ্চল গাজীপুর জেলায় ঈদের সময় যে যানজট ও ভোগান্তি হয় তা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফ্লাইওভারের প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক সাখাওয়াত হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘সফিপুর ও নাওজোড় ফ্লাইওভারের কাজ এখনও সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। গার্ডারের কাজ শেষ হয়েছে। ঈদে যেন ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে না হয় এজন্য ফ্লাইওভার দুটি খুলে দেওয়া হয়েছে।’
গাজীপুর হচ্ছে দেশের ৩৪টি জেলা থেকে সড়ক ও রেলপথে রাজধানী ঢাকায় প্রবেশের একমাত্র প্রবেশমুখ। এসব জেলার মানুষ সড়কপথে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাধ্যমে ঢাকায় যাতায়ত করে। মহাসড়ক দুটি গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় মিলিত হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছে। ব্যস্ত ওই মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার মহাসড়ক জুড়ে একদিকে চলছে বিআরটি প্রকল্পের উন্নয়ন ও উড়ালসেতু নির্মাণ কাজ। অন্যদিকে, কোনো কোনো স্থানে চলছে রাস্তা মেরামত ও প্রশস্তকরণের কাজ। এসব কারণেই এই সরু রাস্তা দিয়ে অধিক পরিমাণ যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়াও সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে যাওয়ায় ও কাদা সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে প্রায়শ সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, দীর্ঘ সময় আটকা পড়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রী ও যানবাহনকে। পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
প্রতিবছর এ সড়কপথে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে গাজীপুরের চন্দ্রা, সফিপুর, ভোগড়া বাইপাস ও চান্দনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যাত্রী ও চালকদের যানজটে পড়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যানজটের এ দুর্ভোগ কমাতে ২০১৯ সালে গাজীপুর মহানগরীর নাওজোড় ও সফিপুরে দুটি ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয়। এতে কাজ চলমান থাকায় প্রতিদিনই যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে সংকুচিত হয়ে পড়া সড়ক অধিকাংশ সময়ই যানজট লেগে থাকে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদের ছুটিতে যানবাহনের চাপ অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়াও গাজীপুরে রয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক ছোটবড় শিল্পকারখানা। যার অধিকাংশই পোশাক তৈরির কারখানা। ঈদের ছুটিতে এসব কারখানার শ্রমিকেরা নিজেদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এমন আশঙ্কায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে সোমবার খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় ও সফিপুর বাজারের ফ্লাইওভার দুটি।
বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটা আশার বাণী শোনাতে চাচ্ছি, আমাদের প্রকল্পের ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টের দুটি অংশ আরএসডি অংশের ৭৬ শতাংশ অগ্রগতি, আর টঙ্গীর বিবিএ অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৬৪ শতাংশ। সবমিলিয়ে আমাদের ৭৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। অর্থাৎ আমরা এরই মধ্যে চার ভাগের তিনভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে মানুষ এ মুহূর্তে সড়কের শতভাগ না হলেও অন্তত ৮০ ভাগ স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারবে। মানুষ এখন এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুরের চৌরাস্তা পর্যন্ত নতুন লেন দিয়ে চা পান করতে করতে যেতে পারবে।’
হাইওয়ের সালনা কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভার দুটি খুলে দেওয়ায় এবারের ঈদে উত্তরবঙ্গগামী মানুষের যানজটের ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (ট্রফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দে বাড়ি যেতে পারে সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রায় ৩০০ পুলিশ সদস্য মহানগরী এলাকায় মহাসড়কে কাজ করবেন। তারা যানজট স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবেন। আরও অতিরিক্ত একশ জন পুলিশ সদস্য মহাসড়কে নিয়োজিত থাকবেন, তারা তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করবেন।’
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ঈদযাত্রা সহজ ও নিরাপদ করতে আমরা একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি, যাতে সবাই যথাযথভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে। কোনো অবস্থাতেই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবারের ঈদযাত্রাকে নিরাপদ ও স্বাভাবিক রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’