ঈদুল আজহার আগে ও পরে মোট ১২ দিনে দেশে ২৭৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। তারা বলছে, এ সময়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে এক হাজার ১৯৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৪৩, শিশু ৫৮ জন। দুর্ঘটনার মধ্যে ২৭ ভাগের বেশি হয়েছে ভোর ও সকালে।

আজ বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য তুলে ধরেছে। নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংস্থাটি। তারা এসব দুর্ঘটনার জন্য সড়ক পরিবহণ খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে।

প্রতিবেদনে গত চার বছরের ঈদুল আজহার যাত্রাকালের দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হয়। সে অনুযায়ী, এ বছর দুর্ঘটনা এবং এতে নিহত ও আহতের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে ঈদযাত্রার সময় ১৪৬ দুর্ঘটনায় ১৯৭ জন নিহত হয়। পরের দুই বছরে নিহতের সংখ্যা ছিল ২২৯ ও ২০৭। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার ঈদযাত্রায় ১৫৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১২৩ জন, যা মোট নিহতের ৩৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৪৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

এ ছাড়া যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৩ জন। এই সময়ে ৯টি নৌ দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছে এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। ১৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং চার জন আহত হয়েছে।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ১২৩ জন, বাসযাত্রী ৩৩ জন, ট্রাক-পিকআপ-লরি আরোহী ১৬ জন, বাস-প্রাইভেটকার যাত্রী ১৮ জন, থ্রি–হুইলার যাত্রী ৫৭ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী ১০ জন এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ৮ জন নিহত হয়েছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর এবং নিহত পথচারীদের ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়েছে। ২০২১ সালের ঈদুল আজহা উদ্‌যাপনকালে ৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৫ জন নিহত হয়েছিল।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে চার দশমিক ৭৪, সকালে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ, দুপুরে ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, বিকেলে ২০ দশমিক ৮০ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৯ দশমিক ৮৫ দশমিক এবং রাতে ২২ দশমিক ২৬।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ আর প্রাণহানি ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং প্রাণহানি ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ও প্রাণহানি ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে খুলনা বিভাগে। আর এ বিভাগে প্রাণহানি ১১ দশমিক ৫৭ ভাগ।

বরিশালে দুর্ঘটনা পাঁচ দশমিক ৪৭ ভাগ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ৪৬ ভাগ। সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা চার দশমিক ৭৪ ভাগ এবং প্রাণহানি ছয় দশমিক ৭৫। রংপুরে দুর্ঘটনা ছয় দশমিক ৯৩ ভাগ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৩২। ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা পাঁচ দশমিক ১০ এবং প্রাণহানি পাঁচ দশমিক ৭৮ ভাগ।

 ঈদযাত্রা ও দুর্ঘটনা পর্যালোচনা

এবারের ঈদুল আজহা উদ্‌যাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২৬ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনা ফিরতি যাত্রায় বেশি হয়েছে। গত বছরের ঈদুল আজহার চেয়ে এ বছরের ঈদুল আজহায় দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৬১ শতাংশ।