উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে পরীক্ষামূলক মেট্রোরেল চলবে আজ
মেট্রোরেল আজ রোববার প্রথম বারের মতো উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে। এর আগে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করেছে মেট্রোরেল।
ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক এ–সংক্রান্ত এক ওয়েবিনারে গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান।
রাজধানীর মানুষ আগামী বছরের ডিসেম্বরে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন বলেও জানান ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক।
ঢাকা এবং এর আশপাশে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পারফরম্যান্স টেস্ট তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শুরুতে উত্তরা থেকে তিনটি স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করে মেট্রোরেল। গত মাসে দ্বিতীয় ধাপে তা সম্প্রসারণ করে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত ছয়টি স্টেশনে আসে। শেষ ধাপে আগামী রোববার আগারগাঁও পর্যন্ত পারফরম্যান্স টেস্ট শুরু হবে।
মেট্রোরেলের কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবে। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবে ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে নয় ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবে। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে এবং দাঁড়িয়ে মিলিয়ে সর্বাধিক দুই হাজার ৩০৮ যাত্রী চড়তে পারবে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের পারফরম্যান্স টেস্টের অংশ হিসেবে প্রথম কোনো অংশে চলাচলের শুরুতে গতি থাকে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার। অর্থাৎ মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও অংশে ১৫ কিলোমিটারের কম গতিতে ট্রেন চলবে। অবশ্য ট্রেন উত্তরা থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত অনেক আগে থেকেই পরীক্ষামূলক চলাচল করছে। ওই পথে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি তোলা হয়েছে। মেট্রোরেল পুরোপুরি বিদ্যুৎ–চালিত। সংকেত, যোগাযোগসহ ১৭ থেকে ১৮টি ব্যবস্থা ট্রেন চলার ক্ষেত্রে কাজ করে।
এক নজরে মেট্রোরেল প্রকল্প
সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মেট্রোরেল ব্যবস্থাকে ম্যাস র্যাতপিড ট্রানজিট (এমআরটি) নামে একটি কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে সরকার। অতি জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনতে এমআরটি স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।
২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ‘মেট্রোরেল প্রকল্প’ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন লাভ করে। ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রকল্প ঋণ ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ২৫ শতাংশ। ২০১৬ থেকে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাইকা। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। মেট্রোরেল প্রকল্প লাইনের পুরো কাজ আটটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে।
রুট ও স্টেশন
সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেলের চূড়ান্ত রুট হচ্ছে উত্তরা তৃতীয় ধাপ-পল্লবী, রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে (চন্দ্রিমা উদ্যান-সংসদ ভবন) খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট-সোনারগাঁও হোটেল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। সম্পূর্ণ রুটের ১৬টি স্টেশন থাকছেএগুলো হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপু-১১, মিরপুর সেকশন-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল। ট্রেন চালানোর জন্য বিদ্যুৎ নেওয়া হবে জাতীয় গ্রিড থেকে। ঘণ্টায় দরকার হবে ১৩ দশমিক ৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর জন্য উত্তরা, পল্লবী, তালতলা, সোনারগাঁ ও বাংলা একাডেমি এলাকায় পাঁচটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থাকবে।
মেট্রোরেলের ট্রায়াল-রান
গত ১১ মে মেট্রোরেলের ট্রায়াল-রান করা হয়। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেট্রোরেলের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত, জাইকার প্রতিনিধি ও মেট্রোরেল প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।