উপনির্বাচনে কলারছড়ি থেকে বেরিয়ে এলো নৌকা!
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে অবশেষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের কথাই সত্য হলো। ‘কলারছড়ি’ থেকে বেরিয়ে এলো ‘নৌকা’।
বিএনপির বহিষ্কৃতনেতা উকিল আব্দুস সাত্তার ভুইয়াই নির্বাচিত হলেন। তিনি ৪৪ হাজার ৮১৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) আব্দুল হামিদ ভাসানী পেয়েছেন নয় হাজার ৫৮০ ভোট। এ ছাড়া বিএনপির অপর বহিষ্কৃতনেতা সাবেক আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিখোঁজ আবু আসিফ আহমেদ স্বতন্ত্রপ্রার্থী (মোটারগাড়ি) পেয়েছেন তিন হাজার ২৩৮ ভোট এবং জাকের পার্টির জহিরুল হক জুয়েল (গোলাপ ফুল) পেয়েছেন এক হাজার ৪২৭ ভোট।
উকিল আব্দুস সাত্তার ভুইয়া এই আসনে এর আগে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি বিএনপির সরকারের আমলে টেকনুক্রেট কোটায় আইন প্রতিমন্ত্রী ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন বিএনপির সাবেক প্রবীণ এ নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার ভুইয়া। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি দলের সব ধরনের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আবারও নির্বাচনে অংশ নেন। পরে বিএনপিও তাঁকে দলের সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কার করে। সেই সঙ্গে আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলা বিএনপি তাঁকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তাঁকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। পরে তাঁকে নিয়ে নানা মহলে গুঞ্জন শুরু হয় যে তিনি আওয়ামী লীগের যোগদান করছেন। তবে এ গুঞ্জনর স্পস্ট হতে থাকে নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মধ্যদিয়ে। একপর্যায়ে উকিল আব্দুস সাত্তারকে সমর্থন জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিজয়ী করতে মাঠে নেমে পড়েন। তাঁরা ইউনিয়নে ইউনিয়নে উকিল আব্দুস সাত্তার ভুইয়া সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে কর্মিসভাসহ প্রচার-প্রচারণা চালান। যদিও ক্ষমতাসীন এই দলটির দাবি তিনি একজন সৎ ও ভালো মানুষ হওয়ায় এবং গণতন্ত্র রক্ষায় তারা তাঁকে সমর্থন জানিয়ে তার জন্য কাজ করেছেন।
ভোটের দিন উকিল আব্দুস সাত্তারের নির্বাচনি এলাকা সরাইলের বিভিন্ন ইউনিয়নে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁরা কেন্দ্রে না গিয়ে তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগনেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের অনেক ভালো প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও এখানে কাউকে নমিনেশন না দেওয়ার বিষয়টি সঠিক হয়নি। আজকে যারা সাত্তার সাহেবকে ভালো মানুষ হিসেবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি তাকে নিয়ে একাধিক এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতা সভা-সমাবেশ করেছেন—এটি দলের জন্য শুভ নয়। তারা আগামী দিনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বিরুদ্ধেই আবার কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন?’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি জানান, উকিল সাত্তার যে কাজটি করেছেন তা নীতি বিবর্জিত। ভোট হয়েছে সরাইলে আর ভোট দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গিয়ে বহিরাগতরা। যে আসনে তিন লাখ ৭৩ হাজারেরও বেশি ভোট, সেখানে ভোট পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৮১৭টি। এটি কেমন ভোট হয়েছে স্থানীয়রাসহ দেশবাসী দেখতে পেয়েছে। বিএনপিসহ কোনো সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘নির্বাচনে উকিল সাত্তারের বিজয় মানে গণতন্ত্রের বিজয়। অপরাজনীতির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বিজয়। কারণ উকিল সাত্তার দলত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং বিএনপি এই নির্বাচনকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন উপহার দিয়েছে—যেখানে সাধারণ মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থী উকিল সাত্তারকে বিজয়ী করেছে। এ আসনটি সব সময় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলেই ছিল। তাই আমরা এ আসনে দলীয় প্রার্থী দেইনি।’
উল্লেখ্য, আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। নির্বাচন ঘিরে তেমন কোনো উচ্ছ্বাসও দেখা যায়নি ভোটারদের মধ্যে।