‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে’ ভারতে পালান এসআই আকবর
সিলেটের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কৃত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া নিজের ইচ্ছায় পালিয়ে যাননি। তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁকে দুই মাস পালিয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
আজ সোমবার দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্তে খাসিয়াদের কাছে আটক অবস্থায় এ দাবি করেন আকবর। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
আকবরের দাবি, ‘ভাই, আমি খুনি না। ইচ্ছে করে আমি একা (রায়হান উদ্দিন আহমদ) মারিনি। রিমান্ড দিছিল পাঁচ-ছয়জন। এজন্য মরে গেছে ভাই। মারছিল জনগণ, আমরা হাসপাতাল নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু ওখান থেকে সে (রায়হান) মরে গেছে।’
তাহলে ঘটনার পর পালানোর কারণ জানতে চাইলে আকবর বলেন, ‘আমি ভাগে আসছিলাম যে, বলছে সাসপেশন (বরখাস্ত) করছে। গ্রেপ্তার করতে পারে। (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) বলেছে, দুই মাস পর সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। এরপর গেলে হ্যান্ডেল করা যাবে। আমি অন্য কোনো কারণে ভাগি নাই।’
সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান উদ্দিন আহমদকে (৩৩) গত ১০ অক্টোবর রাতে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। পরের দিন ১১ অক্টোবর সকালে তাঁর লাশ পায় পরিবার। পরে ওই দিন রাতে নিহত রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। স্বজনদের অভিযোগ, ১০ হাজার টাকা না পেয়ে রায়হানকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর ১২ অক্টোবর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এসআই টিটু চন্দ্র দাস, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ ও তৌহিদ মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যাহার করা হয় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে। পরে ২১ অক্টোবর মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে এসআই হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গত ১২ অক্টোবর পর্যন্ত আকবর পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন। এরপর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি যাতে পালিয়ে ভারতে চলে যেতে না পারেন- এজন্য সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী সব থানা এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয় বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন সিলেট জেলার পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন।
এদিকে আকবরের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শ পাওয়ার পর সিলেটের ভোলাগঞ্জ সীমান্ত ও মেঘালয়ের মাঝেরগাঁও এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। প্রথমে শিলং হয়ে আসামের শিলচরে অবস্থান করেন। আজ রোববার দুপুরে কানাইঘাট উপজেলার ডোনা সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে আসার পথে সীমান্ত এলাকায় লকডাউন থাকায় খাসিয়ারা আটক করে। এরপর তারা তাঁকে বাংলাদেশের খাসিয়াদের কাছে হস্তান্তর করে।
পরে দুপুর ১টার দিকে স্থানীয় খাসিয়ারা ডোনা বিজিবি ক্যাম্পে তাঁকে হস্তান্তর করে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. ফায়াজ উদ্দিন।
ওই চেয়ারম্যান আরো জানান, সেখানে আকবর নিজেকে প্রথমে নিজের নাম খোকন দাস এবং পরে নিজেকে সেলিম বলে পরিচয় দেন।
আজ দুপুর ১টা ৫৭ মিনিটে বিজিবি সদস্যরা আকবরকে কানাইঘাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
এ খবর লেখা পর্যন্ত এসআই আকবরকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আনা হচ্ছে বলে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন জানিয়েছেন।