ঋণ আত্মসাতের মামলায় এস কে সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড
ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে ঋণ আত্মসাতের দায়ে চার বছর এবং মানি লন্ডারিংয়ের আরেক ধারায় সাত বছরসহ মোট ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এস কে সিনহাকে একই সঙ্গে ৪৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং তা দিতে ব্যর্থ হলে অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) সাবেক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়। এদের মধ্যে এমডি এ কে এম শামীমের চার বছরের কারাদণ্ড এবং বাকি আসামিদের তিন বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু, বিচারক অসুস্থ থাকায় তারিখ পিছিয়ে পরবর্তী রায় ঘোষণার জন্য ২১ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়। পরবর্তীকালে বিচারক রায় প্রস্তুত করতে না পারায় আজ মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) নতুন দিন ধার্য করেন বিচারক।
২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর এস কে সিনহা শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে চলে যান। এরপর আর তিনি দেশে ফেরেননি।
২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন—ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম, সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) ও সাবেক ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তাঁর স্ত্রী সান্ত্রী রায়।
এরপর ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ। এর আগে ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর কমিশনের সভায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র প্রস্তুতের আগে মৃত হিসেবে প্রমাণ মেলায় এক আসামির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও নতুন একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
যার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে তিনি হলেন ফারমার্স ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদ। অপরদিকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ব্যাংকটির অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীকে।
অভিযোগপত্রে যা আছে
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দুটি চলতি হিসাব খোলেন। এর পরে ওই বছরের ৭ নভেম্বর তাঁরা দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। ব্যাংক হিসাব খোলা ও ঋণ আবেদনপত্রে দুজনই বাড়ি নম্বর ৫১, সড়ক নম্বর ১২, সেক্টর ১০, উত্তরা আবাসিক এলাকা, এই ঠিকানা উল্লেখ করেন। ওই বাড়ি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ঋণ আবেদনে জামানত হিসেবে রণজিৎ চন্দ্র সাহার স্ত্রী সান্ত্রী রায় সিমির সাভারের ৩২ শতাংশ জমি দেখানো হয়। এই দুজনই এস কে সিনহার পূর্বপরিচিত।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ঋণ আবেদন দুটি কোনোরকম যাচাই-বাছাই করা হয়নি। রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ এবং ব্যাংকের কোনো নিয়মনীতিও মানা হয়নি।