এই হাত দিয়ে ৪৯ জন মানুষকে দাফন করেছি : শামীম ওসমান
২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতার কথা উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, ‘আমাদের বাড়ি হীরা মহলে আগুন দেওয়া হয়েছিল, পেশাব করা হয়েছিল, এবং বায়তুল আমান ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দলের ১৭ জনকে মারা হয়েছিল। এই হাত দিয়ে ৪৯ জন মানুষকে দাফন করেছি। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে তো কাউকে আঘাত করি নাই। এমনকি একটা ফুলের টোকাও দেই নাই।’
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর এলাকায় শনিবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন। কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর সভাপতিতে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামসহ অন্যান্যরা।
শামীম ওসমান বলেন, ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ৬ লেনের কাজ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এই রোডে আধুনিক ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য স্পেশাল লাইট দেওয়া হবে। যাতে পঙ্গু লোকেরাও রাস্তা পারাপার হতে পারে। সে কারণে ফুটওভার ব্রিজ করা হবে। খুব শিগগিরই সড়কে মানুষের ভোগান্তি কমে আসবে।’
শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘লিংক রোডের দুই পাশে শেখ কামাল আইটি ইনস্টিটিউট ও কলেজ করা হবে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় করে। ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ হবে। টেন্ডার হয়ে গেছে, খুব শিগগিরই কাজ ধরা হবে। বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফতুল্লার পাঁচটি ইউনিয়নের সড়ক ও ড্রেনের উন্নয়নের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ঈদের পরেই এই কাজ ধরা হবে। তাছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের পুরোনো সড়কের ডিপিপি পাস হয়ে গেছে ১২০ ফিট চওড়া, এটা বাংলাদেশের একমাত্র আরসিসি রাস্তা হবে।’
নারায়ণগঞ্জকে শান্ত রাখার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘আরেকবার ইলেকশন করব ওইটা তো পরের কথা, যেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে; তাই বিএনপির ভাইদের উদ্দেশে বলতে চাই- ভালো-মন্দ সব দলের মধ্যে আছে। ২০০১ এর পরে যে অত্যাচার হয়েছে আমাদের ওপরে, একটি দুইটি তিনটি না; আমাদের ১৭ জন মানুষকে মারা হয়েছে। এমনকি বিএনপির তৈমূর আলম খন্দকারের ভাই সাব্বির সে কোনো পার্টি করত না, মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল বলে তাকেও হত্যা করা হয়েছে। আমার ভাইয়ের ফ্যাক্টরিতে হামলা করা হয়েছে। আমার ভাই রাজনীতি করত না, সেলিম ওসমান ভাইয়ের ৩০০ গরুর দুধের বান কেটে দেওয়া হয়েছিল, রাজাহাঁসের গলা কেটে দেওয়া হয়েছিল, আমাদের বাড়ি হীরা মহলে আগুন দেওয়া হয়েছিল, পেশাব করা হয়েছিল এবং বায়তুল আমান ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এই হাত দিয়ে ৪৯ জন মানুষকে দাফন করেছি। কই আমরা ক্ষমতায় আসার পরে তো কাউকে আঘাত করি নাই। একটা ফুলের টোকাও দেই নাই।’
সাবেক সংসদ সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিনকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেন, ‘হঠাৎ করেই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিটাকে অস্থির করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটা মানুষ বিএনপিতে ১২-১৩ বছর ছিল না, চুপচাপ ছিল। দলের কোনো খবর রাখছিল না। এই লোকটা আসার পর থেকেই দেখলাম নারায়ণগঞ্জে অস্থির রাজনীতি শুরু হয়ে গেল। আমি প্রত্যেকটা দলের ত্যাগী নেতাদের সম্মান করি। সেটা বিএনপির হোক, জাতীয় পার্টির হোক আর আওয়ামী লীগের হোক।’